2 |
|
3 |
হাজার চুরাশির মা |
4 |
মহাশ্বেতা দেবী |
5 |
|
6 |
৫ |
7 |
সকাল |
8 |
স্বপ্নে সুজাতা বাইশ বছর আগেকার এক সকালে ফিরে গিয়েছিলেন, প্রায়ই যান। নিজেই ব্যাগে গুছিয়ে রাখেন তোয়ালে, জামা, শাড়ি, টুথব্রাশ, সাবান। সুজাতার বয়স এখন তিপান্ন। স্বপ্নে তিনি দেখেন একত্রিশ বছরের সুজাতাকে, ব্যাগ গোছানোয় ব্যস্ত। গর্ভের ভারে মন্থর শরীর, তখনো যুবতী এক সুজাতা ব্রতীকে পৃথিবীতে আনবেন বলে একটি একটি করে জিনিস ব্যাগে তোলেন। সেই সুজাতার মুখ বার বার যন্ত্রণায় কুঁচকে যায়, দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে কান্না সামলে নেন সুজাতা, স্বপ্নের সুজাতা, ব্রতী আসছে। |
9 |
সেদিন রাত আটটা থেকেই যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল, হেম অভিজ্ঞের মত বলেছিল, পেট নাবুতে নেমেছে মা। আর দেরি নেই। হেমই ওঁর হাত ধরে বলেছিল, ভাল ভালতে দুজনেই দু’ঠাঁই হয়ে ফিরে এস। |
10 |
যন্ত্রণা হচ্ছিল, ভয়ানক যন্ত্রণা। যে কোন সময়ে সন্তান হতে পারে বলে সুজাতা আগের দিন থেকেই নার্সিংহোমে। জ্যোতির বয়স তখন দশ, নীপার আট, তুলির ছয়। শাশুড়ি সুজাতার কাছেই ছিলেন, মনে আছে। জ্যোতির বাবা শাশুড়ির একমাত্র সন্তান। একটি সন্তান হতেই শাশুড়ি বিধবা। সুজাতার সন্তান হওয়া দেখতে পারতেন না তিনি, ভয়ংকর বিদ্বেষের চোখে তাকাতেন। ঠিক সন্তান হবার সম-সমকালে চলে যেতেন বোনের বাড়ী, সুজাতাকে অকূলে ভাসিয়ে। |
11 |
স্বামী বলতেন মা অত্যন্ত নরম, বুঝলে? তিনি এসব দেখতে পারেন না, যন্ত্রণা-টন্ত্রণা—চেঁচামেচি। |
12 |
অথচ সুজাতা চেঁচাতেন না, কাতরাতেন না কখনো। দাঁতে ঠোঁট চেপে ধরে ছেলেমেয়েদের বিলিব্যবস্থা করতেন। সেবার শাশুড়ি এখানে ছিলেন, কেননা বোন কলকাতায় ছিলেন না। জ্যোতিদের বাবা কানপুর গিয়েছিলেন কাজে, মনে আছে। দিব্যনাথ জানতেনও না মা থেকে যাবেন এবার। থাকেন না, এবার |
13 |
|
14 |
৬ |
15 |
থাকবেন না এই জানতেন। তবু সুজাতার জন্য ব্যবস্থা করে যান নি দিব্যনাথ। কোনদিনই করেন নি। সুজাতা বাথরুমে গিয়ে যন্ত্রণায় কেঁপে ওঠেন। ভয় পেয়ে যান রক্ত দেখে। নিজেই সব গুছিয়ে নেন, ঠাকুরকে বলেন ট্যাক্সি আনতে। |
16 |
নার্সিংহোম চলে যান একা একা। ডাক্তার খুব গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলেন। ভয় পেয়েছিলেন খুব। সুজাতার চোখ যন্ত্রণায় ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল, যেন চোখের ওপর কাচ ঢেকে দিচ্ছিল কে, অস্বচ্ছ কাচ। জোর করে চোখ খুলে ডাক্তারের দিকে চেয়ে সুজাতা বলেছিলেন, অ্যাম আই অলরাইট? |
17 |
নিশ্চয়। |
18 |
চাইল্ড? |
19 |
আপনি ঘুমোন। |
20 |
কি করবেন? |
21 |
অপারেশন। |
22 |
ডাক্তারবাবু1, চাইল্ড? |
23 |
আপনি ঘুমোন। আমি ত আছি। একা এলেন কেন? |
24 |
উনি নেই। |
25 |
সুজাতা অবাক হয়েছিলেন। তিনি ত’ আশাই করেন নি, কলকাতায় থাকলেও দিব্যনাথ সঙ্গে আসবেন, ডাক্তার কেন আশা করেন। দিব্যনাথ সঙ্গে আসেন না সুজাতাকে নিয়ে যান না সময় হলে। নবজাতকের কান্না শুনতে হবে বলে তেতলায় ঘুমোন। সন্তানদের অসুখ হলেও রাতে খোঁজ নেন না। তবে দিব্যনাথ লক্ষ্য করেন, সুজাতাকে লক্ষ্য করে দেখেন, আবার মা হবার যোগ্য শরীর হচ্ছে কিনা সুজাতার। |
26 |
টনিক খাচ্ছ ত? |
27 |
গাঢ়, যেন কফবসা গলায় জিগ্যেস করেন দিব্যনাথ। কামনায় অস্থির হলে ওঁর গলায় যেন কফ জমে থকথকে হয়ে যায় স্বর। সুজাতা জানেন দিব্যনাথকে। দিব্যনাথ তাঁর শরীর স্বাস্থ্যের খোঁজ নেবার একটি অর্থই হতে পারে। ডাক্তার কি করে জানবেন দিব্যনাথকে? |
28 |
|
29 |
৭ |
30 |
সুজাতাকে ওষুধে দেন। ওষুধে ব্যথা কমে নি। সেই সময়ে সহসা সুজাতার মনে ভীষণ ব্যাকুলতা এসেছিল সন্তানের জন্যে। তুলি হবার পর ছ’বছর কেটে যায় প্রায়। অনেক কষ্টে সুজাতা নিজেকে রক্ষা করেছিলেন, শেষ রাখতে পারেন নি। |
31 |
তাই অশ্লীল, অশুচি লেগেছিল নিজেকে ন’মাস ধরে। শরীরের ক্রমবর্ধমান ভারকে মনে হয়েছিল অভিশাপ। কিন্তু যখন বুঝলেন তাঁর আর সন্তানের জীবনসংশয় হতে পারে, তখনি বুক ভরে উঠেছিল ব্যাকুল মমতায়। সুজাতা ডাক্তারকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। বলেছিলেন, অপারেশন করুন ওকে বাঁচান। |
32 |
তাই ত করছি। |
33 |
ডাক্তারের কথায় নার্স ইঞ্জেকশন দেয়। যন্ত্রণা সুজাতার তলপেট ফুঁড়ে ফুঁড়ে ঢুকছিল আর বেরোচ্ছিল। উনিশশো আটচল্লিশ সাল। ষোলই জানুআরি। সুজাতা বিছানার সাদা চাদর খামচে ধরছিলেন বার বার। কপাল ঘেমে উঠছিল। চোখের নিচে কালো দাগটা ছড়িয়ে পড়ছিল, বড় হচ্ছিল। একটুও শীত করছিল না সুজাতার। অথচ সে জানুআরিতে তীব্র শীত। |
34 |
|
35 |
তলপেটে যন্ত্রণা ফুঁড়ে ফুঁড়ে ঢুকছে আর বেরোচ্ছে। বিছানার সাদা চাদর খামচে’ ঘামতে ঘামতে সুজাতা জেগে উঠলেন। পাশে জ্যোতির বাবাকে দেখে তাঁর সাদা কপালে লম্বা ভুরু দুটো কুঁচকে গেল। জ্যোতির বাবা পাশের খাটে কেন? তারপর মাথা নাড়লেন! ব্রতী হবার দিন জ্যোতির বাবা কাছে ছিলেন না, তাই সুজাতার স্বপ্নেও দিব্যনাথ কখনো থাকেন না, কিন্তু এখন ত আর স্বপ্ন দেখছেন না সুজাতা। |
36 |
তারপর কোনমতে হাত বাড়ালেন। ব্যারালগান1 ট্যাবলেট। জল। ট্যাবলেট খেলেন, জল খেলেন। আঁচল দিয়ে কপাল মুছলেন। 1Baralgan is a painkiller |
37 |
আবার শুলেন। এখন খুব দরকার এক থেকে একশো গুণে ফেলা। ডাক্তারের নির্দেশ। গুণলেই ব্যথা কমে যায়। গুণতে যা সময় লাগে, তার মধ্যেই ব্যারালগান কাজ করতে শুরু করে। ব্যথা কমে। |
38 |
|
39 |
৮ |
40 |
তারপর ব্যথা কমে। সুজাতাকে ক্লান্ত, অবসন্ন, পরাজিত করে ব্যথা কমে। ব্যথা এখনই কমেছে। এখন ব্যথা কমা দরকার। ঘড়ির দিকে চাইলেন। ছ’টা বেজেছে। দেওয়ালের দিকে চাইলেন। ক্যালেণ্ডার। সতেরই জানুআরি। ষোলই জানুআরি সারারাত যন্ত্রণা ছিল, জ্ঞানে-অজ্ঞানে, ইথারের গন্ধ, চড়া আলো, আচ্ছন্ন যন্ত্রণার ঘোলাটে পর্দার ওপারে ডাক্তারদের নড়াচড়া সারারাত, সারারাত, তারপর ভোরবেলা, সতেরই জানুআরি ভোরে ব্রতী এসে পৌঁছেছিল। আজ সেই সতেরই জানুআরি, সেই ভোর, দু’বছর আগে সতেরই জানুআরি এই ঘরে, এমনি করে এই লোকটির পাশের খাটেই ঘুমোচ্ছিলেন সুজাতা। টেলিফোন বেজেছিল। পাশের টেবিল। হঠাৎ। |
41 |
টেলিফোন বাজছে। জ্যোতির ঘরে। দু’বছর আগে সেদিনের পরেই জ্যোতি টেলিফোনটা ওর নিজের ঘরে নিয়ে যায়, বিবেচক, বিবেচক জ্যোতি। তাঁর প্রথম সন্তান, তাঁর জ্যেষ্ঠ। দিব্যনাথের অনুগত ও বাধ্য ছেলে। বিনির সহৃদয় স্বামী, সুমনের স্নেহময় পিতা। |
42 |
বিবেচক জ্যোতি। সুজাতা দু’বছর আগে একান্ন পার করেছিলেন, জ্যোতির বাবা ছাপান্ন। নিরাপদ বয়স, জীবন দু’জনের গুছানো সুশৃঙ্খল। মেয়ের বিয়ে হয়েছে, ছোট মেয়ে মন ও পাত্র স্থির করেছে, বড়ছেলে সুপ্রতিষ্ঠিত, ছোট ছেলেকে বাবা কলেজের পরই বিলাতে পাঠাবেন। সব গুছানো, সুশৃঙ্খল, সুন্দর ছিল, বড় সুন্দর। |
43 |
সেই সময়ে সেই বয়সে টেলিফোন বেজেছিল। মা ঘুমচোখে1 রিসিভার তুলেছিলেন। হঠাৎ একটা অচেনা নৈর্ব্যক্তিক অফিসার কণ্ঠ জিগ্যেস করেছিল, ব্রতী চ্যাটার্জি আপনার কে হয়? |
44 |
ছেলে? কাঁটাপুকুরে আসুন। |
45 |
হ্যাঁ, সেই মুখ-অবয়ব-রক্তমাংসহীন1 কণ্ঠ বলেছিল, কাঁটাপুকুরে আসুন। রিসিভার আছড়ে পড়েছিল। মা পড়ে গিয়েছিল দাঁতে দাঁত লেগে। |
46 |
দু’বছর আগে সতেরই জানুআরির ভোরে ব্রতীর জন্মদিনে, ব্রতীর পৃথিবীতে পৌঁছবার সম-সমকালে এই সুন্দর ঝকঝকে বাড়িতে, এই শান্ত সুন্দর পরিবারে, |
47 |
|
48 |
৯ |
49 |
এই টেলিফোনের খবরের মত একটা বিশৃঙ্খল, হিসেব ছাড়া ঘটনা ঘটেছিল। |
50 |
সেই জন্যেই জ্যোতি টেলিফোনটা সরিয়ে নিয়ে যায়। সুজাতা তা জানতেন না। তিনমাস সুজাতা কিছুই জানতেন না। বিছানায় পড়ে থাকতেন চোখে হাতচাপা1 দিয়ে। কখনো কাঁদতেন না চেঁচিয়ে। হেম, একা হেম ওঁর কাছে থাকত, ঘুমের ওষুধ দিত, ওঁর হাত ধরে বসে থাকত। |
51 |
তাই সুজাতা জানতেন না কবে টেলিফোনটা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। |
52 |
তিনমাস বাদে সুজাতা আবার ব্যাঙ্কে যেতে শুরু করলেন। আবার জ্যোতি নীপা আর তুলির সঙ্গে সহজভাবে কথা বললেন। জ্যোতির ছেলে সুমনের পেন্সিল কেটে দিলেন। জ্যোতির স্ত্রী বিনিকে বললেন, আমার কালোপাড়1 শাড়ীটা কি কাচতে দিয়েছ? |
53 |
জ্যোতির বাবা যখন বম্বে গেলেন, তখন তাঁর সুটকেসে ইসবগুলের ভুসি দিয়ে দিলেন— |
54 |
এমনি করেই কখন স্বাভাবিক হয়ে গেল সব, সহজ হয়ে গেল, তখন সুজাতা লক্ষ্য করলেন টেলিফোনটা তাঁর ঘর থেকে জ্যোতির ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। |
55 |
দেখেই ওঁর ভুরু কুঁচকে গিয়েছিল। জ্যোতির বুদ্ধি এত কম! মাথা নেড়েছিলেন বার বার জ্যোতির নির্বোধিতা দেখে। এখন ত আর কোন টেলিফোন আসবে না। জ্যোতির বাবার নিজস্ব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সির আপিস। জ্যোতি ব্রিটিশ নামাঙ্কিত ফার্মে মেজসাহেব। নীপা, বড় মেয়ের বর কাস্টম্সে বড় অফিসার। তুলি যাকে বিয়ে করেছে, সেই টোনি কাপাডিয়া নিজে এজেন্সি খুলে সুইডেনে ভারতীয় সিল্ক-বাটিক, কার্পেট, পেতলের নটরাজ ও বাঁকুড়ার পোড়ামাটির ঘোড়া পাঠায়। জ্যোতির শ্বশুর-শাশুড়ি বিলাতেই থাকেন। |
56 |
এরা কেউ এমন কোন বেহিসেবী, বিপজ্জনক কাজ করবে না যেজন্যে হঠাৎ টেলিফোন আসতে পারে, হঠাৎ কাঁটাপুকুর মর্গে ছুটে যেতে হবে সুজাতাকে। |
57 |
এরা কেউ এমন বিরোধিতা করবে না, যেজন্যে জ্যোতি আর তার বাবাকে |
58 |
|
59 |
১০ |
60 |
ছুটোছুটি করতে হয় ওপর মহলে1, কাঁটাপুকুরে যেতে হয় শুধু সুজাতা আর তুলিকে।1ওপর মহল = the corridors of power |
61 |
এরা কেউ এমন অপরাধ করবে না যেজন্যে কাঁটাপুকুরে পড়ে থাকতে হয় চিত হয়ে। একটা ভারি চাদর সরিয়ে ধরে ডোম। ও. সি. জিজ্ঞেস করে, "ডু ইউ আইডেনটিফাই ইওর সান?" |
62 |
এরা সবাই বিবেচক, নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলে, সৎ নাগরিক। এরা সুজাতাকে তেমন কোন অবস্থায় ফেলবে না, জ্যোতির বাবাকে বাধ্য করবে না ছুটোছুটি করতে। সত্যি বলতে কি, তাঁর ছেলে এমন কলঙ্কিতভাবে মরেছে, এই খবরটা ঢাকবার জন্যে জ্যোতির বাবা দড়ি টানাটানি করে বেড়াচ্ছিলেন। |
63 |
টেলিফোন খবরটা জানবার পরই জ্যোতির বাবার প্রথমেই মনে হয়েছিল কেমন করে খবরটা চেপে যাবেন। মনে হয় নি কাঁটাপুকুরে তাঁর যাওয়াটা বেশি জরুরী। জ্যোতি তাঁরই ভাবাদর্শে গড়া, সেও বাবার সঙ্গে বেরিয়ে গিয়েছিল। |
64 |
সুজাতাকে বাড়ির গাড়ি অব্দি নিতে দেননি দিব্যনাথ। কাঁটাপুকুরে তাঁর গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকবে, সে কি হয়? যদি কেউ দেখে ফেলে? |
65 |
সেদিন ব্রতীর সঙ্গে সঙ্গে সুজাতার চেতনায় ব্রতীর বাবারও মৃত্যু ঘটে। ব্রতীর বাবার সেদিনের, সেই মুহূর্তের ব্যবহার সুজাতার চেতনায় প্রবল উল্কাপাত ঘটায়। বিরাট বিস্ফোরণ। আদিম পৃথিবীতে যেমন ঘটেছিল কোটি কোটি বছর আগে। যেমন বিস্ফোরণে মহাদেশগুলো ছিটকে ম্যাপের দুপাশে সরে গিয়েছিল। মাঝখানের দুস্তর ব্যবধান ঢেকে ফেলেছিল মহাসমুদ্র। |
66 |
দিব্যনাথের সেদিনের ব্যবহারের ফলে, দিব্যনাথ জানেন না, সুজাতার চেতনায় তিনি মরে গেছেন, অবশেষে সরে গেলেন বহুদূরে। সুজাতার পাশেই শুয়ে থাকেন দিব্যনাথ, কিন্তু জানতে পারেন না, মৃত ব্রতীর চেয়ে জীবিত দিব্যনাথের মানসম্মানের কথা, নিরাপত্তার কথা বেশি ভেবেছিলেন সেদিন, তাই সুজাতার কাছে তিনি অনস্তিত্ব হয়ে গেছেন। |
67 |
দিব্যনাথের ছোটাছুটি দড়ি টানাটানি সফল হয়েছিল। পরদিন খবরের |
68 |
|
69 |
১১ |
70 |
কাগজে চারটি ছেলের হত্যার খবর বেরোয়। নাম বেরোয়। ব্রতীর নাম কোন কাগজে ছিল না। |
71 |
এইভাবে ব্রতীকে মুছে দিয়েছিলেন দিব্যনাথ। কিন্তু সুজাতা তা পারেন না। |
72 |
সেরকম নিয়ম-ছাড়া, রুটিন-ছাড়া ঘটনা এ বাড়িতে আর ঘটবে না। তবু জ্যোতি টেলিফোন সরিয়ে নিয়ে গেছে দেখে সুজাতা কৌতুকবোধ1 করেছিলেন। |
73 |
বিনি ওঁর ঠোঁটে কৌতুকের হাসি দেখে মনে এত আঘাত পায় যে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে। জ্যোতিকে বলে, শী হ্যাজ নো হার্ট। |
74 |
কথাটা সুজাতাকে শুনিয়ে বলা। সুজাতা শুনেছিলেন, ক্ষুণ্ণ হন নি। ওঁর আগে মনে হয়েছে, আবার মনে হয়েছে, আবার মনে হয়েছিল। বিনি ব্রতীকে ভালবাসত। |
75 |
তখন মনে হয়েছিল বিনি ব্রতীকে ভালবাসে। পরে সে কথা মনে হয় নি। কেননা বারান্দায় ব্রতীর ছবিটা খুঁজে পান নি সুজাতা, ব্রতীর জুতোগুলো দেখতে পান নি। ব্রতীর বর্ষাতিও ছিল না। |
76 |
বিনি, ছবিটা কোথায় গেল? |
77 |
তেতলার ঘরে। |
78 |
তেতলার ঘরে? |
79 |
বাবা বললেন... |
80 |
বাবা বললেন! |
81 |
ব্রতী চলে যাবার পরও ব্রতীকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার প্রয়াস দিব্যনাথ ছাড়েন নি দেখে সুজাতা অবাক হন নি, দুঃখও পান নি নতুন করে। শুধু অবসন্ন মনে ভেবেছিলেন, দিব্যনাথই বলতে পারেন এমন কথা। কিন্তু বিনি কি, না! বলে বাধা দিতে পারত না? |
82 |
কোন কথা না বলে সুজাতা ব্যাঙ্কে চলে যান। ব্যাঙ্কে চাকরি তাঁর বহুদিনের। ব্রতীর তিনবছর বয়সে তিনি কাজে ঢোকেন। ব্রতীর বাবার আপিসে তখন একটু টালমাটাল যাচ্ছিল। দুটো বড় বড় অ্যাকাউণ্ট বেরিয়ে গিয়েছিল হাত থেকে। |
83 |
|
84 |
১২ |
85 |
সেই সময়ে কাজে ঢোকেন সুজাতা। পরিবারের সবাই তাঁকে খুব উৎসাহ দিয়েছিল। এমন কি শাশুড়িও বলেছিলেন, করাই ত উচিত। তুমি বলেই এতদিন বাড়িতে বসেছিলে। দিবুও ত তেমন নয়। তেমন হলে তোমাকে আগেই কাজ করতে পাঠাত। |
86 |
সুজাতা কেন চাকরি করতে চাইছেন, কেন নিজে খোঁজ করে যোগাযোগ করছেন, সে-কথা কেউ জানতে চাইবার যোগ্য, যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন নি। সেটা ভালই হয়েছিল। এ বাড়িতে দিব্যনাথ আর তাঁর মা সকলের মনোযোগ সবসময়ে আকর্ষণ করে রাখতেন। সুজাতার অস্তিত্বটা হয়ে গিয়েছিল ছায়ার মত। অনুগত, অনুগামী, নীরব, অস্তিত্বহীন। |
87 |
চেনাশোনা লোক ছিলেন ব্যাঙ্কে। নইলে কাজটা হত না। সুজাতা চাকরি পেয়েছিলেন পরিবার, বংশপরিচয়, অভিজাত চেহারা, বিশুদ্ধ ইংরাজী উচ্চারণের জোরে। নইলে তাঁর মত লোরেটোর বি. এ. পাস মহিলা ত কতই আছেন, তা কি সুজাতা জানতেন না? |
88 |
শুধু ব্রতী কাঁদত। |
89 |
স্বপ্নে, তাঁর স্বপ্নে, তিন বছরের ব্রতী তাঁর হাঁটু জড়িয়ে ধরে কতবার কেঁদে বলে, মা তুমি আজ, শুধু আজ আপিসে যেও না, আমার কাছে থাক। |
90 |
ফর্সা, রোগা ব্রতী, রেশম রেশম চুল, চোখে মমতা। |
91 |
সেই ব্রতী। মুক্তির দশকে একহাজার তিরাশিজনের মৃত্যুর পরে চুরাশি নম্বরে ওর নাম। কেউ যদি মুক্তির দশকের আড়াই বছরে নিহত ছেলেদের নাম সংগ্রহ করে থাকে, তবে সে কি ব্রতীর নাম খুঁজে পাবে? কাগজ দেখে যদি খোঁজ করে থাকে, সে ত জানবে না ব্রতীকে। |
92 |
ব্রতীর বাবা ওর নাম কাগজে উঠতে দেন নি। |
93 |
ব্রতী চ্যাটার্জি? |
94 |
আপনি কে হন? |
95 |
না, মুখ দেখতে হবে না। |
96 |
আইডেণ্টিফিকেশন মার্ক? |
97 |
|
98 |
১৩ |
99 |
গলায় জড়ুল? |
100 |
মুখ দেখতে হবে না? |
101 |
কি বলেছিলেন তিনি? আমি দেখব? নীল শার্ট দেখে, আঙুল দেখে, চুল দেখে, কোথায় তবু সংশয় ছিল মনে। কোথায় যুক্তি বুদ্ধি চোখের দেখা সব পরাস্ত করে সংশয় বলছিল, না মুখ দেখলে জানা যাবে এ ব্রতী নয়? তাই কি সুজাতা বলেছিলেন.... |
102 |
ডোমটি ওঁর ওপর অসীম করুণায় বলেছিল, কি আর দেখবেন মাইজী1? মুখ কি আর আছে কিছু? 1a respectful term of address for a woman in Hindi |
103 |
তখন কি করেছিলেন সুজাতা? অন্য চারটি শব পড়ে আছে। কারা যেন আকুল হয়ে কাঁদছে। কে যেন মাথা ঠুকছে মাটিতে। কারো মুখ মনে পড়ে না। সব ধোঁয়া ধোঁয়া। কিন্তু কোন কোন স্মৃতি হীরের ছুরির মত উজ্জ্বল, কঠিন, স্বয়ংপ্রভ। |
104 |
ওর বুকে, পেটে আর গলায় তিনটে গুলির দাগ ছিল। নীল গর্ত। শরীরে খুব কাছ থেকে ছোঁড়া গুলি। নীলচে চামড়া। কর্ডাইটের1 ঝলসানিতে পোড়া বাদামী রক্ত। গর্তের চারদিকে কর্ডাইটের ঝলসানিতে ঝলসানো হেলো2, চক্রাকার ফাটাফাটা চামড়া। গলায়, পেটে আর বুকে তিনটে গুলির দাগ। 1Cordite is like gunpowder 2halo |
105 |
ব্রতীর মুখ, ব্রতীর মুখ, সুজাতা সবলে দুহাতে চাদর সরিয়ে দেন, ব্রতীর মুখ। শাণিত ও ভারি অস্ত্রের উলটো পিট দিয়ে ঘা মেরে থেঁতলানো, পিষ্ট, ব্রতীর মুখ। পেছন থেকে তুলির অস্ফুট আর্তনাদ। |
106 |
সেই মুখই দেখেন সুজাতা ঝুঁকে পড়ে। আঙুল বোলালেন। ব্রতী! ব্রতী! বলে আঙুল বোলালেন, আঙুল বোলাবার মত মসৃণ চামড়া ছিল না এক ইঞ্চিও। সবই দলিত, থেঁতলানো মাংস। তারপর সুজাতাই মুখ ঢেকে দেন। পেছন ফেরেন। অন্ধের মত তুলিকে জাপটে ধরেন। |
107 |
ব্রতীর বাবা ছবিটা সরিয়ে দিতে বলেছেন, একথা ব্যাঙ্কে যাবার সময়ও মনে ছিল। প্রথম দিন ব্যাঙ্কে যাবার সময়ে। |
108 |
|
109 |
১৪ |
110 |
ব্যাঙ্কে সবাই ওঁর দিকে তাকাচ্ছিল। হঠাৎ সকলের কথা আস্তে হয়ে গিয়েছিল, তারপর চুপচাপ। |
111 |
এজেণ্ট লুথরা এগিয়ে এসেছিল। |
112 |
ম্যাডাম, সো সরি... |
113 |
থ্যাংক য়ু। সুজাতা মুখ তোলেন নি। |
114 |
মেমসাব! |
115 |
একটা জলের গেলাস। ভিখন এগিয়ে ধরেছিল। সুজাতার পুরনো অভ্যেস, আপিসে এসে জল খান এক গেলাস। |
116 |
মেমসাব! |
117 |
ভিখন আস্তে বলেছিল। সুজাতা ওর চোখে বেদনা দেখেছিলেন, মমতা। ভিখন চোখ দিয়ে ওঁকে জড়িয়ে ধরেছে। উনি ওকে জড়িয়ে ধরেছিলেন একদিন। যেদিন ব্যাঙ্কে তার এসেছিল ভিখনের ছেলে অসুখে মরে গেছে। |
118 |
ভিখনের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়েছিলেন সুজাতা। এখনি উনি ওর সহানুভূতি নিতে পারছেন না। ভিখন, আমায় ক্ষমা কর। ব্রতীর মৃত্যু তোর ছেলের মৃত্যুর মত নয় যে? তোর ছেলের মৃত্যু এমন মৃত্যু, তাতে তোকে দেখলেই তুই যে বেয়ারা তা ভুলে গিয়ে তোকে জড়িয়ে ধরা যায়। |
119 |
ব্রতী তো তেমন করে মরে নি। ব্রতীর মৃত্যুর আগে অনেক প্রশ্ন পরে অনেক প্রশ্ন। প্রশ্নচিহ্ন। সরাসরি প্রশ্নচিহ্নের মিছিল। তারপর সব প্রশ্ন অমীমাংসিত থাকতেই, একটি প্রশ্নেরও উত্তর না মিলতেই হঠাৎ ব্রতী চ্যাটার্জির ফাইল বন্ধ করে দেওয়া। |
120 |
তুই আমাকে মাপ কর ভিখন। |
121 |
সারাদিন যন্ত্রচালিতের মত কাজ করছিলেন। সন্ধ্যায় ব্রতীর বাবা বাড়ী ফিরতেই জিগ্যেস করেছিলেন, |
122 |
তুমি ব্রতীর ছবি তেতলায় সরিয়ে দিতে বলেছ? |
123 |
হ্যাঁ। |
124 |
ব্রতীর জুতো? |
125 |
|
126 |
১৫ |
127 |
হ্যাঁ। |
128 |
কেন? |
129 |
কেন! |
130 |
দিব্যনাথ নেড়েছিলেন। কেন ব্রতীর জিনিসপত্র সরিয়ে দেওয়া দরকার, কেন ব্রতীর অস্তিত্ব, স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলা দরকার তা যদি সুজাতা না বোঝেন, কে তাঁকে বোঝাবে? |
131 |
দিব্যনাথ কথা বলেন নি। |
132 |
তেতলার ঘর কি চাবি বন্ধ? |
133 |
হ্যাঁ। |
134 |
চাবি কার কাছে? |
135 |
আমার কাছে। |
136 |
দাও। |
137 |
চাবিটা হাতে নিয়ে উঠে গিয়েছিলেন সুজাতা। তেতলার ঘরে ব্রতী ঘুমোত। আট বছর থেকে ওই ব্যবস্থা। প্রথমটা একা শুতে চাইত না। একলা শুতে ওর ভয় করত। সুজাতা বলেছিলেন, ঠিক আছে, হেম মেঝেতে শোবে। |
138 |
দিব্যনাথ রেগে যান। জ্যোতির বেলা সুজাতার এই দুর্বলতা ছিল না, নীপা আর তুলির বেলাতেও নয়, এইসব কথা বলেন। সুজাতা বলেছিলেন, ওদের বেলাতে ওঁর আপত্তি ছিল। কেন না ওরাও ভয় পেত, কিন্তু তখন দিব্যনাথ যা বলেছেন তার অন্যথা হতে পারে এ সুজাতা জানতেন না। |
139 |
ভয় পেত ব্রতী, খুব ভয় পেত। অত্যন্ত কল্পনাপ্রবণ শিশু যেমন ভয় পায়। রাতে হরিধ্বনি শুনে ভয় পেত, দিনে বহুরূপী ডাকাত সেজে এসে চেঁচালে ভয় পেত। তারপর একদিন ওর সব ভয় চলে যায়। |
140 |
এখন তো ব্রতী সব ভয় আর অভয়ের বাইরে। |
141 |
ছোটবেলা থেকে মৃত্যুর কবিতা বড় প্রিয় ব্রতীর। তাইত সুজাতার স্বপ্নে সাতবছরের ব্রতী পা ঝুলিয়ে জানলায় বসে বসে কবিতা পড়ে কত। স্বপ্নে |
142 |
|
143 |
১৬ |
144 |
সুজাতা যখন ব্রতীকে দেখেন, তখন তাঁর মনে দু’রকম চেতনা কাজ করতে থাকে। একটা মন বলে এ’ত স্বপ্ন। ব্রতী নেই। এ শুধু স্বপ্ন। |
145 |
আরেকটা মন বলে স্বপ্ন নয় সত্যি। |
146 |
সুজাতার স্বপ্নে তাই ব্রতী জানলায় বসে পা ঝুলিয়ে কবিতা পড়ে। সুজাতা বিছানায় বসে শোনেন, ব্রতীর বিছানায়। শোনেন আর ব্রতীর চাদর টেনে দেন। বালিশ ঠিক করে দেন। |
147 |
কখনো ব্রতী ঘুমিয়ে পড়ে, |
148 |
"ভয়কাতুরে ছিল সে সবচেয়ে। |
149 |
সেই খুলেছে আঁধার ঘরের চাবি।" |
150 |
কখনো বা স্বপ্নে দেখেন ব্রতী ‘শিশু’ বইটা নিয়ে ঘুরে ঘুরে পড়ছে। |
151 |
‘আঁধার রাতে চলে গেলি তুই। |
152 |
আঁধার রাতে চুপি চুপি আয় |
153 |
কেউতো1 তোরে2 দেখতে পাবে না। |
154 |
তারা শুধু তারার পানে চায়।’ |
155 |
ঘুমের মধ্যে ‘ব্রতী!’ বলে ডুকরে ডেকে ওঠেন সুজাতা। তারপর ঘুম ভেঙে যায়। এত সত্যি যে স্বপ্নে, এত সত্যি যে, চমকে চমকে চেয়ে সুজাতা দেখেন ব্রতী কোথায়! |
156 |
তেতলার ঘরের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন সুজাতা। ব্রতীর বিছানা গোটানো। জামা আলমারিতে তোলা। দেওয়ালে ছবি। শেল্ফে বই। শুধু স্যুটকেসটা নেই। ওটা পুলিশ নিয়ে গিয়েছিল। |
157 |
ব্রতীর খাটের বাজু ধরে দাঁড়িয়ে সুজাতা ভুরু কুঁচকে ভাবতে চেষ্টা করছিলেন, ব্রতীর হত্যার পেছনে তাঁর কি পরোক্ষ অবদান ছিল? কিভাবে তিনি তৈরি করেছিলেন ব্রতীকে যেজন্যে এই দশকে, যে দশক মুক্তির দশকে পরিণত হতে চলেছে সেই দশকে, ব্রতী হাজার চুরাশি হয়ে গেল! অথবা কি করতেন তিনি, অথচ করেন নি বলে ব্রতী হাজার চুরাশি হয়ে গেল? কোথায় সুজাতা ব্যর্থ হয়েছিলেন? |
158 |
|
159 |
১৭ |
160 |
দিব্যনাথ ব্রতীকে সহ্য করতে পারতেন না। বলতেন, |
161 |
মাদার্স চাইল্ড! তুমি ওকেই শিখিয়েছ আমার শত্রু হতে। |
162 |
সুজাতা অবাক হয়ে যেতেন। কেন তিনি ব্রতীকে বলতে যাবেন তোর বাবার শত্রু হ’? কেন বলবেন? দিব্যনাথ কি সুজাতার শত্রু? দিব্যনাথ যাতে যাতে বিশ্বাস করেন, সেই সম্ভ্রান্ততায়, সচ্ছলতায়, নিরাপত্তায় ত সুজাতাও বিশ্বাস করেন। বিশ্বাস করেন কিনা সুজাতা কখনো সে প্রশ্ন নিজেকে করেন নি। করেন নি যখন, তখন নিশ্চয় তাঁর কোন প্রশ্নই ছিল না। |
163 |
সুজাতা বড়ঘরের মেয়ে। অত্যন্ত রক্ষণশীল পরিবার তাঁদের। লোরেটোয় পড়ানো বি. এ. পাস করানো সবই বিয়ের জন্যে। ছেলের অবস্থা খারাপ, জেনেশুনেই তাঁকে বড়ঘরের ছেলে দিব্যনাথের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। সুজাতার বাবা জানতেন দিব্যনাথ অনেক ওপরে যাবেন। |
164 |
এই বাড়ি, সচ্ছলতা, নিরাপত্তা, এতে সুজাতাও বিশ্বাস করেন। অতএব দিব্যনাথের অভিযোগ মিথ্যে। |
165 |
যদি দিব্যনাথের অভিযোগ মিথ্যে হয়, তাহলে শুধু এই প্রমাণ হয় যে, সুজাতা ব্রতীকে দিব্যনাথের শত্রু হতে বলেন নি। এ প্রমাণ হয় না যে ব্রতী ওর বাবাকে শত্রু ভাবে। ব্রতী যে দিব্যনাথকে সহ্য করতে পারে না সে ত সুজাতাও জানেন। ভাল করেই জানেন। |
166 |
কেন, ব্রতী? |
167 |
দিব্যনাথ চ্যাটার্জি একক ব্যক্তি হিসেবে আমার শত্রু নন। |
168 |
তবে? |
169 |
উনি যে সব বস্তু ও মূল্যে বিশ্বাস করেন, সেগুলোতেও অন্য বহুজনও বিশ্বাস করে। এই মূল্যবোধ যারা লালন করছেন, সেই শ্রেণীটাই আমার শত্রু। উনি সেই শ্রেণীরই একজন। |
170 |
কি বলিস তুই ব্রতী? বুঝি না। |
171 |
বুঝতে চেষ্টা করছ কেন? বোতামটা লাগাও না। |
172 |
ব্রতী, তুই খুব অন্যরকম হয়ে যাচ্ছিস। |
173 |
|
174 |
১৮ |
175 |
কি রকম? |
176 |
বদলে যাচ্ছিস। |
177 |
বদলাব না? |
178 |
কোথায় ঘুরিস সারাদিন? |
179 |
আড্ডা দিই। |
180 |
কাদের সঙ্গে? |
181 |
বন্ধুদের। |
182 |
নে তোর জামা। বোতাম লাগাতে বললি তাই মার দুটো কথা বলার সময় হল। |
183 |
ব্রতী কথা বলে নি। চোখ কুঁচকে হেসেছিল। ওর হাসিতে কথা বলার ভঙ্গিতে কি যেন এসে যাচ্ছিল ক্রমাগত। সহিষ্ণুতা, ধৈর্য। যেন সুজাতা কথা বলার আগেভাগেই ও জানে ওর কথা সুজাতা বুঝবেন না। ওঁর সঙ্গে কথা বলত যেন ওর বাবা, সুজাতা ওর ছোট মেয়ে। ওঁকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে ছেলে ভোলাচ্ছে ব্রতী। সুজাতা বুঝতে পারছিলেন ব্রতী ওঁর অজানা হয়ে যাচ্ছে ক্রমে, অচেনা। তখন মনে দুঃখ হয়েছে খুব। কেন মনে আশঙ্কা হয় নি? ভয় হয় নি? |
184 |
কেন মনে হয় নি মার কাছে ছেলে ক্রমেই অচেনা হয়ে যায়, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এক বাড়িতে বাস করেও, এ থেকে ভীষণ বিপদ হতে পারে একদিন? |
185 |
ব্রতীর ঘরে দাঁড়িয়ে সুজাতা ভুরু কুঁচকে ভেবেছিলেন, আর ভেবেছিলেন। |
186 |
ব্রতী যদি সুজাতার দাদার মত দুরারোগ্য অসুখে মারা যেত, তাহলেও মৃত্যুর পর প্রশ্ন থাকতে পারত মনে। সে প্রশ্নগুলো এইরকম হত—ডাক্তারের কোন ত্রুটি হল, না বাড়ির লোকের? এ ডাক্তারকে না ডেকে ও ডাক্তারকে ডাকলে কি হত? ও ওষুধ না দিয়ে অন্য ওষুধ দিলে কি হত? ব্যাধিজনিত1 মৃত্যুর পরবর্তী প্রশ্নগুলো এই রকমই হয়ে থাকে। |
187 |
ব্রতী যদি দুর্ঘটনায় মরত তাহলে আগে প্রশ্ন হত, যে ধরনের দুর্ঘটনা ঘটল, তা ব্রতী সাবধান হলে, এড়ানো যেত কিনা! তারপর প্রশ্ন হত, যে পরিস্থিতিতে |
188 |
|
189 |
১৯ |
190 |
দুর্ঘটনা ঘটল, তা কোন ভাবে এড়ানো যেত কিনা! সুজাতার যদি দিব্যনাথের মত কোষ্ঠীতে বিশ্বাস থাকত তবে প্রশ্ন হত কোষ্ঠীতে দুর্ঘটনাজনিত1 মৃত্যুর কোন ইঙ্গিত ছিল কিনা! ইঙ্গিত থাকলে তা প্রতিরোধের কোন নিদান ছিল কিনা! |
191 |
ব্রতী যদি দণ্ডনীয় কোন দুরপরাধ1 করতে গিয়ে নিহত হত, তাহলে প্রশ্ন হত—এ বাড়ির ছেলে হয়ে কার দোষে, কোন সঙ্গে পড়ে ব্রতী অপরাধী হল! কোন কোন প্রতিষেধক ব্যবস্থা করলে ব্রতীর এই পরিণতি এড়ানো যেত! |
192 |
ব্রতী ত এর কোন কোঠাতেই পড়ে না। অপরাধের মধ্যে ব্রতী এই সমাজে, এই ব্যবস্থায় বিশ্বাস হারিয়েছিল। ব্রতীর মনে হয়েছিল যে পথ ধরে সমাজ ও রাষ্ট্র চলেছে সে পথে মুক্তি আসবে না। অপরাধের মধ্যে ব্রতী শুধু স্লোগান লেখেনি, স্লোগানে বিশ্বাসও করেছিল। ব্রতীর মুখাগ্নি পর্যন্ত দিব্যনাথ ও জ্যোতি করেন নি। ব্রতী এমনই সমাজবিরোধী যে ব্রতীদের লাশ কাঁটাপুকুরে পড়ে থাকে। রাত হলে পুলিশী হেফাজতে গাদাই হয়ে শ্মশানে আসে। তারপর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। |
193 |
রাতে লাশ জ্বলে। যারা শ্রাদ্ধশান্তিতে বিশ্বাসী, তারাও শাস্ত্রের নিয়মে সকালে শ্রাদ্ধ করতে পারে না। তাদের বসে থাকতে হয় লাল, স্ফীত চোখে সারাদিন। তারপর রাতে একটা ঘেটোবামুনের1 দোর ধরতে হয়। |
194 |
বামুনটা মাথা পিছু থোক টাকা নিয়ে রাতেভিতে1 শ্রাদ্ধ সেরে দেয় ঝটপট। |
195 |
ব্রতী স্লোগান লিখেছিল। পুলিশ যখন ওর ঘর তল্লাশ করে তখন সুজাতা দেখেছিলেন স্লোগানের বয়ান সব। ব্রতীর হাতে লেখা। |
196 |
কেননা জেলই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। |
197 |
বন্দুকের নল থেকেই.... |
198 |
এই দশক মুক্তির দশকে পরিণত হতে চলেছে.... |
199 |
ঘৃণা করুন! চিহ্নিত করুন! চূর্ণ করুন মধ্যপন্থীকে। |
200 |
—আজ ইয়েনানে পরিণত হতে চলেছে। |
201 |
শুনেছিলেন ব্রতীরা বয়ান লেখে, তারপর দেওয়ালে লেখে। রাতেভিতে |
202 |
|
203 |
২০ |
204 |
অন্ধকারে লেখে। আবার কালুর মত মরিয়া হলে বেলা এগারোটায়, পুলিশ পাহারায় যখন পাড়া ঘেরাও, রাস্তায় যখন তপনের রক্ত শুকোয় নি, তখনই লালরঙের1 পোঁচড়া টেনে সম্ভ্রান্ত কোন বাড়ির পরিষ্কার দেওয়ালে লেখা, লাল বাংলার লাল কমরেড লাল তপনের লালরক্তে...বাজার পুড়িয়ে মা... |
205 |
লিখতে লিখতে কালুও গুলি খায় বলে শেষ শব্দটা শেষ হয় না। ওই রকমই থেকে যায়। |
206 |
ব্রতীরা এই এক নতুন জাতের ছেলে। স্লোগান লিখলে বুলেট ছুটে আসে জেনেও ব্রতীরা স্লোগান লেখে। কাঁটাপুকুর যাবার জন্যে হুড়োহুড়ি লাগিয়ে দেয়। |
207 |
সুজাতা ত ব্রতীকে কোন রকম অপরাধীর কোঠাতে ফেলতে পারেন নি? |
208 |
ব্রতীর জন্যে, কাঁদতে কাঁদতেই জ্যোতি ও দিব্যনাথ তাঁকে বুঝিয়েছিলেন, এ সমাজ বড় বড় হত্যাকারী, যারা খাবারে-ওষুধ, শিশু-খাদ্যে ভেজাল মেলায় তারা বেঁচে থাকতে পারে। এ সমাজে নেতারা গ্রামের জনগণকে পুলিশের গুলির মুখে ঠেলে দিয়ে বাড়ি গাড়ি পুলিশ পাহারায় নিরাপদ আশ্রয়ে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু ব্রতী তাদের চেয়ে বড় অপরাধী। কেননা সে এই মুনাফাখোর ব্যবসায়ী ও স্বার্থান্ধ নেতাদের ওপর বিশ্বাস হারিয়েছিল। এই বিশ্বাসহীনতা যে বালক, কিশোর বা যুবকের মনে ঢুকে যায়, তার বয়স বার—ষোল—বাইশ যাই হক, তার শাস্তি নিশ্চিত মৃত্যু। |
209 |
তার এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিত মৃত্যু। যারা মেরুদণ্ডহীন, সুবিধাবাদী—হাওয়া বদল বুঝে মত বদলানো শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীর সমাজকে বর্জন করে। |
210 |
তাদের শাস্তি মৃত্যু। সবাই তাদের হত্যা করতে পারে। সব দল ও মতের লোকেদের এই দলছাড়া তরুণের হত্যা করার নির্বাধ ও গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। আইন, অনুমতি, বিচার লাগে না। |
211 |
একা অথবা যূথবদ্ধভাবে1 এই বিশ্বাসহীন তরুণদের হত্যা করা চলে। বুলেট-ছুরি-দা-বর্শা-সড়কি যে কোন অস্ত্রে যে কোন সময়ে শহরের যে কোন অঞ্চলে, যে কোন দর্শক বা দর্শকদের সামনে। |
212 |
|
213 |
২১ |
214 |
জ্যোতি আর দিব্যনাথ এসব কথা সুজাতাকে পাখিপড়া করে বোঝান। কিন্তু সুজাতা মাথা নেড়েছিলেন। |
215 |
না। |
216 |
ব্রতীর মৃত্যুর আগের প্রশ্ন হল কেন ব্রতী বিশ্বাসহীনতার ব্রতকে প্রচণ্ড বিশ্বাস করেছিল? |
217 |
ওর মৃত্যুর পরের প্রশ্ন হল ব্রতী চ্যাটার্জীর ফাইল বন্ধ হল বটে কিন্তু ওকে হত্যা করে কি সেই বিশ্বাসহীনতার প্রজ্বলন্ত বিশ্বাসকে শেষ করে দেওয়া গেল? ব্রতী নেই, ব্রতীরা নেই। তাতেই কি শেষ হয়ে গেল সব? |
218 |
প্রশ্ন হল ব্রতীর মৃত্যু কি নিরর্থক? ওর মৃত্যুর মানে কি তবে একটা বিরাট ‘না’? |
219 |
সব কী অলীক ছিল? অনস্তিত্ব? ওর বিশ্বাস? ওর ভয়হীনতা? ওর দুর্বার আবেগ? মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সমু, বিজিত, পার্থ আর লালটুকে সাবধান করবার জন্যেই ষোলই জানুআরি নীল শার্ট পরে সুজাতাকে ছেলে ভুলিয়ে বেরিয়ে যাওয়া? যাবার আগে হঠাৎ সুজাতার দিকে তাকানো? দেখে নেওয়া? সুজাতার সুন্দর অভিজাত, প্রৌঢ় মুখের প্রতিটি বেদনার রেখা দেখে মনে এঁকে নেওয়া? |
220 |
সুজাতা মাথা নেড়েছিলেন। ঘর বন্ধ করে বেরিয়ে এসেছিলেন। চাবিটা সেদিন থেকে ওঁর কাছেই থাকে। ওঁর ব্যাগে। আর দুবছর ধরে রাতে উঠে আসেন সুজাতা! ব্রতীর ঘর ঝাঁট দেন, ধুলো ঝাড়েন। বিছানা আবার পেতেছেন সুজাতা। জুতো রেখেছেন আলনার নীচে। জামাকাপড় গুছিয়েছেন। তাঁর মত ক’ হাজার ছেলের মা সকলকে লুকিয়ে ছেলের জামায় হাত বোলায়, ছেলের ছবিতে আঙুল বোলায়? |
221 |
ব্রতীর ঘরে বসে থাকেন সুজাতা। মনে মনে ব্রতীর সঙ্গে কথা বলেন। চোখ বুজে ভাবেন ব্রতী কাছে আছে। ভাবেন কত মা কত ছেলেকে এমনি করে লুকিয়ে কাছে ডাকে, কাছে পেতে চায়? |
222 |
ব্রতীর সঙ্গে কথা বলেন সুজাতা। কখনো ব্রতী উত্তর দেয়, কখনো দেয় না। |
223 |
|
224 |
২২ |
225 |
জ্যোতির ঘরে টেলিফোন বাজছে। ওটা ধরতে গিয়েই এত কথা মনে পড়ল সুজাতার। |
226 |
সমু আর লালটু, বিজিত আর পার্থর বাড়িতে টেলিফোন নেই। টেলিফোন বাজিয়ে ওদের বাড়ির লোকের ঘুম ভাঙাবে না। আজ সমু, বিজিত আর পার্থের মা কি ভাবছেন? আজ সকালে? |
227 |
বিনি শ্লথ পায়ে নাইলনের নাইটি পরে দরজা খুলে দিল। ওর চোখে মুখে বিরক্তি। এত তাড়াতাড়ি বিনি ঘুম থেকে উঠতে চায় না। ওর ঘুম ভাঙে না। |
228 |
নিয়মিত ঘুম আর বিশ্রাম জ্যোতি আর বিনির খুবই দরকার। অত্যন্ত প্রেমাসক্ত সুজাতার বড়ছেলে আর বউ। সুমনের আটমাস বয়স থেকেই অবশ্য ওদের খাট ও বিছানা আলাদা, তবু ওরা অত্যন্ত প্রেমাসক্ত দম্পতি বলে নাম আছে। রক্তমাংসের সুখকে সুজাতা খুব দামী বলে জানতেন। বিনিরা রক্তমাংসের সুখকে প্রেম থেকে ব্যবচ্ছিন্ন করে রেখেছে। |
229 |
ওদের প্রেম অন্যরকম। ওদের বিবাহবার্ষিকীতে খুব উদ্দাম পার্টি হয়। একসঙ্গে ঘোরে দুজনে, বেড়াতে যায়। সুজাতা শুনেছেন বিনি ক্লাবে গেলে জ্যোতি ছাড়া কারো সঙ্গে নাচে না। ফলে সমাজে বিনির খুব সুনাম। সুজাতা ফোন তুললেন, |
230 |
কে? |
231 |
আমি নন্দিনী। |
232 |
নন্দিনী! |
233 |
হ্যাঁ, আমি ফিরে এসেছি। |
234 |
কবে? |
235 |
পরশু। |
236 |
ও। |
237 |
আপনার সঙ্গে আমার একবার দেখা হওয়া দরকার। আপনার ওখানে আমি যাব না। আপনি কি ব্যাঙ্কে যাবেন আজ? |
238 |
আজ আমি যাব না নন্দিনী। আজ আমার ছোটমেয়ে তুলির এনগেজমেন্ট। |
239 |
|
240 |
২৩ |
241 |
তাহলে? |
242 |
তুমি বল কোথায় গেলে দেখা হবে। ঠিক সন্ধ্যাটা বাদ দিয়ে আমি অন্যসময় যেতে পারি। |
243 |
চারটের সময়? |
244 |
যেতে পারি। কোথায় যাব বল? |
245 |
একটা ঠিকানা দিচ্ছি। আপনার বাড়ি থেকে বেশি দূর হবে না। |
246 |
বল। |
247 |
নন্দিনী ঠিকানা বলল। সুজাতা ফোন নামিয়ে রাখলেন। নন্দিনী! ব্রতী নন্দিনীকে ভালবাসত। কিন্তু নন্দিনীকে কখনো দেখেন নি সুজাতা। |
248 |
জ্যোতির দিকে তাকালেন। ঘুমোলে, একমাত্র ঘুমোলেই জ্যোতির মুখে সুজাতা ব্রতীর মুখের আদল দেখতে পান। |
249 |
বেরিয়ে এলেন বারান্দায়। বারান্দায় বেরোতেই বেশ শীতশীত করল! নন্দিনী আর ব্রতী কি একটা কবিতার কাগজ বের করেছিল? ওরা একসঙ্গে নাটক করেছিল, সুজাতার জলবসন্ত হয়, তাই যাওয়া হয় নি। বাড়ি থেকে আর কেউই যায় নি। শুধু হেম বলেছিল, ছোটোখোকা1 অনেক হাততালি পেয়েছে, জানলে গো মা। সবাই খুব সুখ্যেত2 করেছে। |
250 |
হেমই গল্প করত ব্রতীর সঙ্গে। সুজাতার কাছে যখন ব্রতী অচেনা হয়ে যাচ্ছিল, মাঝে মাঝে ওর মুখ দেখে সুজাতা কথা বলতেও ভয় পেতেন, তখনো হেম বলতে পারত, রাজকাজজিতে1 যাচ্ছ তা জানি, এটুকু খেয়ে উদ্ধার করে যাও বাপু। |
251 |
সেই যে দীঘা যাচ্ছি, বলে ব্রতী দীঘার পথে বাস থেকে নেমে অন্য জায়গায় যায়, হেমই তখন ওর স্যুটকেস গোছগাছ করে দিয়েছিল। |
252 |
হেম বলেছিল ছোটখোকার সঙ্গে এট্টা1 মেয়ের ভাব আছে গো মা! ঠাকুর দেখে এয়েছে2। ছোটখোকা বেরুলে3 মেয়েটা পথের ধারে দাঁইড়ে4 থাকে। তা বাদে দুজনা একসঙ্গে চলে যায়। মেয়েটা কালোপানা5। |
253 |
|
254 |
২৪ |
255 |
সেই নন্দিনী! সুজাতার বুক ধড়ফড় করছে কেন? ব্যারালগান খেয়ে বেশি সময় শুয়ে থাকেন নি বলে। নন্দিনী ফোন করেছে বলে? |
256 |
বাথরুম থেকে সেজেগুজে বেরিয়ে এল বিনি। ঘাড় অবধি ছাঁটা রুক্ষ চুল নীল শাড়ীর ওপর নীল নাইলনের কার্ডিগান। রঙে রং মিলিয়ে পরতে কখনো ভুল হয় না বিনির। দীপার হয় না, তুলিরও হয় না। বিনিকে বেশ স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। |
257 |
কে ফোন করেছিল মা? |
258 |
নন্দিনী। |
259 |
নন্দিনী! |
260 |
ব্রতীর বন্ধু। |
261 |
বিনির মুখ কৌতুহলে ভরে গেল। |
262 |
নিচে যাচ্ছ কেন মা? |
263 |
কি হবে না হবে দেখি! তুমি সুমনকে তোল। ওর ত ইস্কুল আছে। বাস আসবে। |
264 |
নিচে তুলিই গেছে। |
265 |
সুজাতা হাসলেন। আজ তুলির এনগেজমেন্ট। আজও বিশ্বাস করতে পারে না ও গিয়ে তদারক না করলেও এ বাড়িতে সকালের চা ব্রেকফাস্ট, দুপুরের রান্না, বিকেলের ঘর সাজানো সব হবে কাউকে বিশ্বাস করে না তুলি। |
266 |
ষোল বৎসর বয়সে ক্রাফ্ট শিখতে গেল তুলি লেখাপড়া ছেড়েই। সেই সময় থেকেই সংসারের ভার ও নিল। আসলে সি. এ. ফার্ম দাঁড়িয়ে যাবার পর দিব্যনাথ সুজাতাকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। সুজাতা শোনেন নি। শাশুড়ি জীবিত ছিলেন ব্রতীর আটবছর অবধি। ততদিন পর্যন্ত সুজাতার একখানা কাপড় নিজের শখে কিনবার অধিকার ছিল না। |
267 |
সেই জন্য |