2
3 হাজার চুরাশির মা
4 মহাশ্বেতা দেবী
5
6
7 সকাল
8 স্বপ্নে সুজাতা বাইশ বছর আগেকার এক সকালে ফিরে গিয়েছিলেন, প্রায়ই যাননিজেই ব্যাগে গুছিয়ে রাখেন তোয়ালে, জামা, শাড়ি, টুথব্রাশ, সাবানসুজাতার বয়স এখন তিপান্নস্বপ্নে তিনি দেখেন একত্রিশ বছরের সুজাতাকে, ব্যাগ গোছানোয় ব্যস্তগর্ভের ভারে মন্থর শরীর, তখনো যুবতী এক সুজাতা ব্রতীকে পৃথিবীতে আনবেন বলে একটি একটি করে জিনিস ব্যাগে তোলেনসেই সুজাতার মুখ বার বার যন্ত্রণায় কুঁচকে যায়, দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে কান্না সামলে নেন সুজাতা, স্বপ্নের সুজাতা, ব্রতী আসছে
9 সেদিন রাত আটটা থেকেই যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল, হেম অভিজ্ঞের মত বলেছিল, পেট নাবুতে নেমেছে মাআর দেরি নেইহেমই ওঁর হাত ধরে বলেছিল, ভাল ভালতে দুজনেই দুঠাঁই হয়ে ফিরে এস
10 যন্ত্রণা হচ্ছিল, ভয়ানক যন্ত্রণাযে কোন সময়ে সন্তান হতে পারে বলে সুজাতা আগের দিন থেকেই নার্সিংহোমেজ্যোতির বয়স তখন দশ, নীপার আট, তুলির ছয়শাশুড়ি সুজাতার কাছেই ছিলেন, মনে আছেজ্যোতির বাবা শাশুড়ির একমাত্র সন্তানএকটি সন্তান হতেই শাশুড়ি বিধবাসুজাতার সন্তান হওয়া দেখতে পারতেন না তিনি, ভয়ংকর বিদ্বেষের চোখে তাকাতেনঠিক সন্তান হবার সম-সমকালে চলে যেতেন বোনের বাড়ী, সুজাতাকে অকূলে ভাসিয়ে
11 স্বামী বলতেন মা অত্যন্ত নরম, বুঝলে? তিনি এসব দেখতে পারেন না, যন্ত্রণা-টন্ত্রণাচেঁচামেচি
12 অথচ সুজাতা চেঁচাতেন না, কাতরাতেন না কখনোদাঁতে ঠোঁট চেপে ধরে ছেলেমেয়েদের বিলিব্যবস্থা করতেনসেবার শাশুড়ি এখানে ছিলেন, কেননা বোন কলকাতায় ছিলেন নাজ্যোতিদের বাবা কানপুর গিয়েছিলেন কাজে, মনে আছেদিব্যনাথ জানতেনও না মা থেকে যাবেন এবারথাকেন না, এবার
13
14
15 থাকবেন না এই জানতেনতবু সুজাতার জন্য ব্যবস্থা করে যান নি দিব্যনাথকোনদিনই করেন নিসুজাতা বাথরুমে গিয়ে যন্ত্রণায় কেঁপে ওঠেনভয় পেয়ে যান রক্ত দেখেনিজেই সব গুছিয়ে নেন, ঠাকুরকে বলেন ট্যাক্সি আনতে
16 নার্সিংহোম চলে যান একা একাডাক্তার খুব গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলেনভয় পেয়েছিলেন খুবসুজাতার চোখ যন্ত্রণায় ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল, যেন চোখের ওপর কাচ ঢেকে দিচ্ছিল কে, অস্বচ্ছ কাচজোর করে চোখ খুলে ডাক্তারের দিকে চেয়ে সুজাতা বলেছিলেন, অ্যাম আই অলরাইট?
17 নিশ্চয়
18 চাইল্ড?
19 আপনি ঘুমোন
20 কি করবেন?
21 অপারেশন
22 ডাক্তারবাবু1, চাইল্ড?
23 আপনি ঘুমোনআমি আছিএকা এলেন কেন?
24 উনি নেই
25 সুজাতা অবাক হয়েছিলেনতিনি আশাই করেন নি, কলকাতায় থাকলেও দিব্যনাথ সঙ্গে আসবেন, ডাক্তার কেন আশা করেনদিব্যনাথ সঙ্গে আসেন না সুজাতাকে নিয়ে যান না সময় হলেনবজাতকের কান্না শুনতে হবে বলে তেতলায় ঘুমোনসন্তানদের অসুখ হলেও রাতে খোঁজ নেন নাতবে দিব্যনাথ লক্ষ্য করেন, সুজাতাকে লক্ষ্য করে দেখেন, আবার মা হবার যোগ্য শরীর হচ্ছে কিনা সুজাতার
26 টনিক খাচ্ছ ?
27 গাঢ়, যেন কফবসা গলায় জিগ্যেস করেন দিব্যনাথকামনায় অস্থির হলে ওঁর গলায় যেন কফ জমে থকথকে হয়ে যায় স্বরসুজাতা জানেন দিব্যনাথকেদিব্যনাথ তাঁর শরীর স্বাস্থ্যের খোঁজ নেবার একটি অর্থই হতে পারেডাক্তার কি করে জানবেন দিব্যনাথকে?
28
29
30 সুজাতাকে ওষুধে দেনওষুধে ব্যথা কমে নিসেই সময়ে সহসা সুজাতার মনে ভীষণ ব্যাকুলতা এসেছিল সন্তানের জন্যেতুলি হবার পর বছর কেটে যায় প্রায়অনেক কষ্টে সুজাতা নিজেকে রক্ষা করেছিলেন, শেষ রাখতে পারেন নি
31 তাই অশ্লীল, অশুচি লেগেছিল নিজেকে মাস ধরেশরীরের ক্রমবর্ধমান ভারকে মনে হয়েছিল অভিশাপকিন্তু যখন বুঝলেন তাঁর আর সন্তানের জীবনসংশয় হতে পারে, তখনি বুক ভরে উঠেছিল ব্যাকুল মমতায়সুজাতা ডাক্তারকে ডেকে পাঠিয়েছিলেনবলেছিলেন, অপারেশন করুন ওকে বাঁচান
32 তাই করছি
33 ডাক্তারের কথায় নার্স ইঞ্জেকশন দেয়যন্ত্রণা সুজাতার তলপেট ফুঁড়ে ফুঁড়ে ঢুকছিল আর বেরোচ্ছিলউনিশশো আটচল্লিশ সালষোলই জানুআরিসুজাতা বিছানার সাদা চাদর খামচে ধরছিলেন বার বারকপাল ঘেমে উঠছিলচোখের নিচে কালো দাগটা ছড়িয়ে পড়ছিল, বড় হচ্ছিলএকটুও শীত করছিল না সুজাতারঅথচ সে জানুআরিতে তীব্র শীত
34
35 তলপেটে যন্ত্রণা ফুঁড়ে ফুঁড়ে ঢুকছে আর বেরোচ্ছেবিছানার সাদা চাদর খামচেঘামতে ঘামতে সুজাতা জেগে উঠলেনপাশে জ্যোতির বাবাকে দেখে তাঁর সাদা কপালে লম্বা ভুরু দুটো কুঁচকে গেলজ্যোতির বাবা পাশের খাটে কেন? তারপর মাথা নাড়লেন! ব্রতী হবার দিন জ্যোতির বাবা কাছে ছিলেন না, তাই সুজাতার স্বপ্নেও দিব্যনাথ কখনো থাকেন না, কিন্তু এখন আর স্বপ্ন দেখছেন না সুজাতা
36 তারপর কোনমতে হাত বাড়ালেনব্যারালগান1 ট্যাবলেটজলট্যাবলেট খেলেন, জল খেলেনআঁচল দিয়ে কপাল মুছলেন
1Baralgan is a painkiller
37 আবার শুলেনএখন খুব দরকার এক থেকে একশো গুণে ফেলাডাক্তারের নির্দেশগুণলেই ব্যথা কমে যায়গুণতে যা সময় লাগে, তার মধ্যেই ব্যারালগান কাজ করতে শুরু করেব্যথা কমে
38
39
40 তারপর ব্যথা কমেসুজাতাকে ক্লান্ত, অবসন্ন, পরাজিত করে ব্যথা কমেব্যথা এখনই কমেছেএখন ব্যথা কমা দরকারঘড়ির দিকে চাইলেনটা বেজেছেদেওয়ালের দিকে চাইলেনক্যালেণ্ডারসতেরই জানুআরিষোলই জানুআরি সারারাত যন্ত্রণা ছিল, জ্ঞানে-অজ্ঞানে, ইথারের গন্ধ, চড়া আলো, আচ্ছন্ন যন্ত্রণার ঘোলাটে পর্দার ওপারে ডাক্তারদের নড়াচড়া সারারাত, সারারাত, তারপর ভোরবেলা, সতেরই জানুআরি ভোরে ব্রতী এসে পৌঁছেছিলআজ সেই সতেরই জানুআরি, সেই ভোর, দুবছর আগে সতেরই জানুআরি এই ঘরে, এমনি করে এই লোকটির পাশের খাটেই ঘুমোচ্ছিলেন সুজাতাটেলিফোন বেজেছিলপাশের টেবিলহঠাৎ
41 টেলিফোন বাজছেজ্যোতির ঘরেদুবছর আগে সেদিনের পরেই জ্যোতি টেলিফোনটা ওর নিজের ঘরে নিয়ে যায়, বিবেচক, বিবেচক জ্যোতিতাঁর প্রথম সন্তান, তাঁর জ্যেষ্ঠদিব্যনাথের অনুগত বাধ্য ছেলেবিনির সহৃদয় স্বামী, সুমনের স্নেহময় পিতা
42 বিবেচক জ্যোতিসুজাতা দুবছর আগে একান্ন পার করেছিলেন, জ্যোতির বাবা ছাপান্ননিরাপদ বয়স, জীবন দুজনের গুছানো সুশৃঙ্খলমেয়ের বিয়ে হয়েছে, ছোট মেয়ে মন পাত্র স্থির করেছে, বড়ছেলে সুপ্রতিষ্ঠিত, ছোট ছেলেকে বাবা কলেজের পরই বিলাতে পাঠাবেনসব গুছানো, সুশৃঙ্খল, সুন্দর ছিল, বড় সুন্দর
43 সেই সময়ে সেই বয়সে টেলিফোন বেজেছিলমা ঘুমচোখে1 রিসিভার তুলেছিলেনহঠাৎ একটা অচেনা নৈর্ব্যক্তিক অফিসার কণ্ঠ জিগ্যেস করেছিল, ব্রতী চ্যাটার্জি আপনার কে হয়?
44 ছেলে? কাঁটাপুকুরে আসুন
45 হ্যাঁ, সেই মুখ-অবয়ব-রক্তমাংসহীন1 কণ্ঠ বলেছিল, কাঁটাপুকুরে আসুনরিসিভার আছড়ে পড়েছিলমা পড়ে গিয়েছিল দাঁতে দাঁত লেগে
46 দুবছর আগে সতেরই জানুআরির ভোরে ব্রতীর জন্মদিনে, ব্রতীর পৃথিবীতে পৌঁছবার সম-সমকালে এই সুন্দর ঝকঝকে বাড়িতে, এই শান্ত সুন্দর পরিবারে,
47
48
49 এই টেলিফোনের খবরের মত একটা বিশৃঙ্খল, হিসেব ছাড়া ঘটনা ঘটেছিল
50 সেই জন্যেই জ্যোতি টেলিফোনটা সরিয়ে নিয়ে যায়সুজাতা তা জানতেন নাতিনমাস সুজাতা কিছুই জানতেন নাবিছানায় পড়ে থাকতেন চোখে হাতচাপা1 দিয়েকখনো কাঁদতেন না চেঁচিয়েহেম, একা হেম ওঁর কাছে থাকত, ঘুমের ওষুধ দিত, ওঁর হাত ধরে বসে থাকত
51 তাই সুজাতা জানতেন না কবে টেলিফোনটা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়
52 তিনমাস বাদে সুজাতা আবার ব্যাঙ্কে যেতে শুরু করলেনআবার জ্যোতি নীপা আর তুলির সঙ্গে সহজভাবে কথা বললেনজ্যোতির ছেলে সুমনের পেন্সিল কেটে দিলেনজ্যোতির স্ত্রী বিনিকে বললেন, আমার কালোপাড়1 শাড়ীটা কি কাচতে দিয়েছ?
53 জ্যোতির বাবা যখন বম্বে গেলেন, তখন তাঁর সুটকেসে ইসবগুলের ভুসি দিয়ে দিলেন
54 এমনি করেই কখন স্বাভাবিক হয়ে গেল সব, সহজ হয়ে গেল, তখন সুজাতা লক্ষ্য করলেন টেলিফোনটা তাঁর ঘর থেকে জ্যোতির ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে
55 দেখেই ওঁর ভুরু কুঁচকে গিয়েছিলজ্যোতির বুদ্ধি এত কম! মাথা নেড়েছিলেন বার বার জ্যোতির নির্বোধিতা দেখেএখন আর কোন টেলিফোন আসবে নাজ্যোতির বাবার নিজস্ব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সির আপিসজ্যোতি ব্রিটিশ নামাঙ্কিত ফার্মে মেজসাহেবনীপা, বড় মেয়ের বর কাস্টম্সে বড় অফিসারতুলি যাকে বিয়ে করেছে, সেই টোনি কাপাডিয়া নিজে এজেন্সি খুলে সুইডেনে ভারতীয় সিল্ক-বাটিক, কার্পেট, পেতলের নটরাজ বাঁকুড়ার পোড়ামাটির ঘোড়া পাঠায়জ্যোতির শ্বশুর-শাশুড়ি বিলাতেই থাকেন
56 এরা কেউ এমন কোন বেহিসেবী, বিপজ্জনক কাজ করবে না যেজন্যে হঠাৎ টেলিফোন আসতে পারে, হঠাৎ কাঁটাপুকুর মর্গে ছুটে যেতে হবে সুজাতাকে
57 এরা কেউ এমন বিরোধিতা করবে না, যেজন্যে জ্যোতি আর তার বাবাকে
58
59 ১০
60 ছুটোছুটি করতে হয় ওপর মহলে1, কাঁটাপুকুরে যেতে হয় শুধু সুজাতা আর তুলিকে
1ওপর মহল = the corridors of power
61 এরা কেউ এমন অপরাধ করবে না যেজন্যে কাঁটাপুকুরে পড়ে থাকতে হয় চিত হয়েএকটা ভারি চাদর সরিয়ে ধরে ডোম. সি. জিজ্ঞেস করে, "ডু ইউ আইডেনটিফাই ইওর সান?"
62 এরা সবাই বিবেচক, নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলে, সৎ নাগরিকএরা সুজাতাকে তেমন কোন অবস্থায় ফেলবে না, জ্যোতির বাবাকে বাধ্য করবে না ছুটোছুটি করতেসত্যি বলতে কি, তাঁর ছেলে এমন কলঙ্কিতভাবে মরেছে, এই খবরটা ঢাকবার জন্যে জ্যোতির বাবা দড়ি টানাটানি করে বেড়াচ্ছিলেন
63 টেলিফোন খবরটা জানবার পরই জ্যোতির বাবার প্রথমেই মনে হয়েছিল কেমন করে খবরটা চেপে যাবেনমনে হয় নি কাঁটাপুকুরে তাঁর যাওয়াটা বেশি জরুরীজ্যোতি তাঁরই ভাবাদর্শে গড়া, সেও বাবার সঙ্গে বেরিয়ে গিয়েছিল
64 সুজাতাকে বাড়ির গাড়ি অব্দি নিতে দেননি দিব্যনাথকাঁটাপুকুরে তাঁর গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকবে, সে কি হয়? যদি কেউ দেখে ফেলে?
65 সেদিন ব্রতীর সঙ্গে সঙ্গে সুজাতার চেতনায় ব্রতীর বাবারও মৃত্যু ঘটেব্রতীর বাবার সেদিনের, সেই মুহূর্তের ব্যবহার সুজাতার চেতনায় প্রবল উল্কাপাত ঘটায়বিরাট বিস্ফোরণআদিম পৃথিবীতে যেমন ঘটেছিল কোটি কোটি বছর আগেযেমন বিস্ফোরণে মহাদেশগুলো ছিটকে ম্যাপের দুপাশে সরে গিয়েছিলমাঝখানের দুস্তর ব্যবধান ঢেকে ফেলেছিল মহাসমুদ্র
66 দিব্যনাথের সেদিনের ব্যবহারের ফলে, দিব্যনাথ জানেন না, সুজাতার চেতনায় তিনি মরে গেছেন, অবশেষে সরে গেলেন বহুদূরেসুজাতার পাশেই শুয়ে থাকেন দিব্যনাথ, কিন্তু জানতে পারেন না, মৃত ব্রতীর চেয়ে জীবিত দিব্যনাথের মানসম্মানের কথা, নিরাপত্তার কথা বেশি ভেবেছিলেন সেদিন, তাই সুজাতার কাছে তিনি অনস্তিত্ব হয়ে গেছেন
67 দিব্যনাথের ছোটাছুটি দড়ি টানাটানি সফল হয়েছিলপরদিন খবরের
68
69 ১১
70 কাগজে চারটি ছেলের হত্যার খবর বেরোয়নাম বেরোয়ব্রতীর নাম কোন কাগজে ছিল না
71 এইভাবে ব্রতীকে মুছে দিয়েছিলেন দিব্যনাথকিন্তু সুজাতা তা পারেন না
72 সেরকম নিয়ম-ছাড়া, রুটিন-ছাড়া ঘটনা বাড়িতে আর ঘটবে নাতবু জ্যোতি টেলিফোন সরিয়ে নিয়ে গেছে দেখে সুজাতা কৌতুকবোধ1 করেছিলেন
73 বিনি ওঁর ঠোঁটে কৌতুকের হাসি দেখে মনে এত আঘাত পায় যে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেজ্যোতিকে বলে, শী হ্যাজ নো হার্ট
74 কথাটা সুজাতাকে শুনিয়ে বলাসুজাতা শুনেছিলেন, ক্ষুণ্ণ হন নিওঁর আগে মনে হয়েছে, আবার মনে হয়েছে, আবার মনে হয়েছিলবিনি ব্রতীকে ভালবাসত
75 তখন মনে হয়েছিল বিনি ব্রতীকে ভালবাসেপরে সে কথা মনে হয় নিকেননা বারান্দায় ব্রতীর ছবিটা খুঁজে পান নি সুজাতা, ব্রতীর জুতোগুলো দেখতে পান নিব্রতীর বর্ষাতিও ছিল না
76 বিনি, ছবিটা কোথায় গেল?
77 তেতলার ঘরে
78 তেতলার ঘরে?
79 বাবা বললেন...
80 বাবা বললেন!
81 ব্রতী চলে যাবার পরও ব্রতীকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার প্রয়াস দিব্যনাথ ছাড়েন নি দেখে সুজাতা অবাক হন নি, দুঃখও পান নি নতুন করেশুধু অবসন্ন মনে ভেবেছিলেন, দিব্যনাথই বলতে পারেন এমন কথাকিন্তু বিনি কি, না! বলে বাধা দিতে পারত না?
82 কোন কথা না বলে সুজাতা ব্যাঙ্কে চলে যানব্যাঙ্কে চাকরি তাঁর বহুদিনেরব্রতীর তিনবছর বয়সে তিনি কাজে ঢোকেনব্রতীর বাবার আপিসে তখন একটু টালমাটাল যাচ্ছিলদুটো বড় বড় অ্যাকাউণ্ট বেরিয়ে গিয়েছিল হাত থেকে
83
84 ১২
85 সেই সময়ে কাজে ঢোকেন সুজাতাপরিবারের সবাই তাঁকে খুব উৎসাহ দিয়েছিলএমন কি শাশুড়িও বলেছিলেন, করাই উচিততুমি বলেই এতদিন বাড়িতে বসেছিলেদিবুও তেমন নয়তেমন হলে তোমাকে আগেই কাজ করতে পাঠাত
86 সুজাতা কেন চাকরি করতে চাইছেন, কেন নিজে খোঁজ করে যোগাযোগ করছেন, সে-কথা কেউ জানতে চাইবার যোগ্য, যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন নিসেটা ভালই হয়েছিল বাড়িতে দিব্যনাথ আর তাঁর মা সকলের মনোযোগ সবসময়ে আকর্ষণ করে রাখতেনসুজাতার অস্তিত্বটা হয়ে গিয়েছিল ছায়ার মতঅনুগত, অনুগামী, নীরব, অস্তিত্বহীন
87 চেনাশোনা লোক ছিলেন ব্যাঙ্কেনইলে কাজটা হত নাসুজাতা চাকরি পেয়েছিলেন পরিবার, বংশপরিচয়, অভিজাত চেহারা, বিশুদ্ধ ইংরাজী উচ্চারণের জোরেনইলে তাঁর মত লোরেটোর বি. . পাস মহিলা কতই আছেন, তা কি সুজাতা জানতেন না?
88 শুধু ব্রতী কাঁদত
89 স্বপ্নে, তাঁর স্বপ্নে, তিন বছরের ব্রতী তাঁর হাঁটু জড়িয়ে ধরে কতবার কেঁদে বলে, মা তুমি আজ, শুধু আজ আপিসে যেও না, আমার কাছে থাক
90 ফর্সা, রোগা ব্রতী, রেশম রেশম চুল, চোখে মমতা
91 সেই ব্রতীমুক্তির দশকে একহাজার তিরাশিজনের মৃত্যুর পরে চুরাশি নম্বরে ওর নামকেউ যদি মুক্তির দশকের আড়াই বছরে নিহত ছেলেদের নাম সংগ্রহ করে থাকে, তবে সে কি ব্রতীর নাম খুঁজে পাবে? কাগজ দেখে যদি খোঁজ করে থাকে, সে জানবে না ব্রতীকে
92 ব্রতীর বাবা ওর নাম কাগজে উঠতে দেন নি
93 ব্রতী চ্যাটার্জি?
94 আপনি কে হন?
95 না, মুখ দেখতে হবে না
96 আইডেণ্টিফিকেশন মার্ক?
97
98 ১৩
99 গলায় জড়ুল?
100 মুখ দেখতে হবে না?
101 কি বলেছিলেন তিনি? আমি দেখব? নীল শার্ট দেখে, আঙুল দেখে, চুল দেখে, কোথায় তবু সংশয় ছিল মনেকোথায় যুক্তি বুদ্ধি চোখের দেখা সব পরাস্ত করে সংশয় বলছিল, না মুখ দেখলে জানা যাবে ব্রতী নয়? তাই কি সুজাতা বলেছিলেন....
102 ডোমটি ওঁর ওপর অসীম করুণায় বলেছিল, কি আর দেখবেন মাইজী1? মুখ কি আর আছে কিছু?
1a respectful term of address for a woman in Hindi
103 তখন কি করেছিলেন সুজাতা? অন্য চারটি শব পড়ে আছেকারা যেন আকুল হয়ে কাঁদছেকে যেন মাথা ঠুকছে মাটিতেকারো মুখ মনে পড়ে নাসব ধোঁয়া ধোঁয়াকিন্তু কোন কোন স্মৃতি হীরের ছুরির মত উজ্জ্বল, কঠিন, স্বয়ংপ্রভ
104 ওর বুকে, পেটে আর গলায় তিনটে গুলির দাগ ছিলনীল গর্তশরীরে খুব কাছ থেকে ছোঁড়া গুলিনীলচে চামড়াকর্ডাইটের1 ঝলসানিতে পোড়া বাদামী রক্তগর্তের চারদিকে কর্ডাইটের ঝলসানিতে ঝলসানো হেলো2, চক্রাকার ফাটাফাটা চামড়াগলায়, পেটে আর বুকে তিনটে গুলির দাগ
1Cordite is like gunpowder
2halo
105 ব্রতীর মুখ, ব্রতীর মুখ, সুজাতা সবলে দুহাতে চাদর সরিয়ে দেন, ব্রতীর মুখশাণিত ভারি অস্ত্রের উলটো পিট দিয়ে ঘা মেরে থেঁতলানো, পিষ্ট, ব্রতীর মুখপেছন থেকে তুলির অস্ফুট আর্তনাদ
106 সেই মুখই দেখেন সুজাতা ঝুঁকে পড়েআঙুল বোলালেনব্রতী! ব্রতী! বলে আঙুল বোলালেন, আঙুল বোলাবার মত মসৃণ চামড়া ছিল না এক ইঞ্চিওসবই দলিত, থেঁতলানো মাংসতারপর সুজাতাই মুখ ঢেকে দেনপেছন ফেরেনঅন্ধের মত তুলিকে জাপটে ধরেন
107 ব্রতীর বাবা ছবিটা সরিয়ে দিতে বলেছেন, একথা ব্যাঙ্কে যাবার সময়ও মনে ছিলপ্রথম দিন ব্যাঙ্কে যাবার সময়ে
108
109 ১৪
110 ব্যাঙ্কে সবাই ওঁর দিকে তাকাচ্ছিলহঠাৎ সকলের কথা আস্তে হয়ে গিয়েছিল, তারপর চুপচাপ
111 এজেণ্ট লুথরা এগিয়ে এসেছিল
112 ম্যাডাম, সো সরি...
113 থ্যাংক য়ুসুজাতা মুখ তোলেন নি
114 মেমসাব!
115 একটা জলের গেলাসভিখন এগিয়ে ধরেছিলসুজাতার পুরনো অভ্যেস, আপিসে এসে জল খান এক গেলাস
116 মেমসাব!
117 ভিখন আস্তে বলেছিলসুজাতা ওর চোখে বেদনা দেখেছিলেন, মমতাভিখন চোখ দিয়ে ওঁকে জড়িয়ে ধরেছেউনি ওকে জড়িয়ে ধরেছিলেন একদিনযেদিন ব্যাঙ্কে তার এসেছিল ভিখনের ছেলে অসুখে মরে গেছে
118 ভিখনের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়েছিলেন সুজাতাএখনি উনি ওর সহানুভূতি নিতে পারছেন নাভিখন, আমায় ক্ষমা করব্রতীর মৃত্যু তোর ছেলের মৃত্যুর মত নয় যে? তোর ছেলের মৃত্যু এমন মৃত্যু, তাতে তোকে দেখলেই তুই যে বেয়ারা তা ভুলে গিয়ে তোকে জড়িয়ে ধরা যায়
119 ব্রতী তো তেমন করে মরে নিব্রতীর মৃত্যুর আগে অনেক প্রশ্ন পরে অনেক প্রশ্নপ্রশ্নচিহ্নসরাসরি প্রশ্নচিহ্নের মিছিলতারপর সব প্রশ্ন অমীমাংসিত থাকতেই, একটি প্রশ্নেরও উত্তর না মিলতেই হঠাৎ ব্রতী চ্যাটার্জির ফাইল বন্ধ করে দেওয়া
120 তুই আমাকে মাপ কর ভিখন
121 সারাদিন যন্ত্রচালিতের মত কাজ করছিলেনসন্ধ্যায় ব্রতীর বাবা বাড়ী ফিরতেই জিগ্যেস করেছিলেন,
122 তুমি ব্রতীর ছবি তেতলায় সরিয়ে দিতে বলেছ?
123 হ্যাঁ
124 ব্রতীর জুতো?
125
126 ১৫
127 হ্যাঁ
128 কেন?
129 কেন!
130 দিব্যনাথ নেড়েছিলেনকেন ব্রতীর জিনিসপত্র সরিয়ে দেওয়া দরকার, কেন ব্রতীর অস্তিত্ব, স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলা দরকার তা যদি সুজাতা না বোঝেন, কে তাঁকে বোঝাবে?
131 দিব্যনাথ কথা বলেন নি
132 তেতলার ঘর কি চাবি বন্ধ?
133 হ্যাঁ
134 চাবি কার কাছে?
135 আমার কাছে
136 দাও
137 চাবিটা হাতে নিয়ে উঠে গিয়েছিলেন সুজাতাতেতলার ঘরে ব্রতী ঘুমোতআট বছর থেকে ওই ব্যবস্থাপ্রথমটা একা শুতে চাইত নাএকলা শুতে ওর ভয় করতসুজাতা বলেছিলেন, ঠিক আছে, হেম মেঝেতে শোবে
138 দিব্যনাথ রেগে যানজ্যোতির বেলা সুজাতার এই দুর্বলতা ছিল না, নীপা আর তুলির বেলাতেও নয়, এইসব কথা বলেনসুজাতা বলেছিলেন, ওদের বেলাতে ওঁর আপত্তি ছিলকেন না ওরাও ভয় পেত, কিন্তু তখন দিব্যনাথ যা বলেছেন তার অন্যথা হতে পারে সুজাতা জানতেন না
139 ভয় পেত ব্রতী, খুব ভয় পেতঅত্যন্ত কল্পনাপ্রবণ শিশু যেমন ভয় পায়রাতে হরিধ্বনি শুনে ভয় পেত, দিনে বহুরূপী ডাকাত সেজে এসে চেঁচালে ভয় পেততারপর একদিন ওর সব ভয় চলে যায়
140 এখন তো ব্রতী সব ভয় আর অভয়ের বাইরে
141 ছোটবেলা থেকে মৃত্যুর কবিতা বড় প্রিয় ব্রতীরতাইত সুজাতার স্বপ্নে সাতবছরের ব্রতী পা ঝুলিয়ে জানলায় বসে বসে কবিতা পড়ে কতস্বপ্নে
142
143 ১৬
144 সুজাতা যখন ব্রতীকে দেখেন, তখন তাঁর মনে দুরকম চেতনা কাজ করতে থাকেএকটা মন বলে স্বপ্নব্রতী নেই শুধু স্বপ্ন
145 আরেকটা মন বলে স্বপ্ন নয় সত্যি
146 সুজাতার স্বপ্নে তাই ব্রতী জানলায় বসে পা ঝুলিয়ে কবিতা পড়েসুজাতা বিছানায় বসে শোনেন, ব্রতীর বিছানায়শোনেন আর ব্রতীর চাদর টেনে দেনবালিশ ঠিক করে দেন
147 কখনো ব্রতী ঘুমিয়ে পড়ে,
148 "ভয়কাতুরে ছিল সে সবচেয়ে
149 সেই খুলেছে আঁধার ঘরের চাবি।"
150 কখনো বা স্বপ্নে দেখেন ব্রতীশিশুবইটা নিয়ে ঘুরে ঘুরে পড়ছে
151 আঁধার রাতে চলে গেলি তুই
152 আঁধার রাতে চুপি চুপি আয়
153 কেউতো1 তোরে2 দেখতে পাবে না
154 তারা শুধু তারার পানে চায়।’
155 ঘুমের মধ্যেব্রতী!’ বলে ডুকরে ডেকে ওঠেন সুজাতাতারপর ঘুম ভেঙে যায়এত সত্যি যে স্বপ্নে, এত সত্যি যে, চমকে চমকে চেয়ে সুজাতা দেখেন ব্রতী কোথায়!
156 তেতলার ঘরের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন সুজাতাব্রতীর বিছানা গোটানোজামা আলমারিতে তোলাদেওয়ালে ছবিশেল্ফে বইশুধু স্যুটকেসটা নেইওটা পুলিশ নিয়ে গিয়েছিল
157 ব্রতীর খাটের বাজু ধরে দাঁড়িয়ে সুজাতা ভুরু কুঁচকে ভাবতে চেষ্টা করছিলেন, ব্রতীর হত্যার পেছনে তাঁর কি পরোক্ষ অবদান ছিল? কিভাবে তিনি তৈরি করেছিলেন ব্রতীকে যেজন্যে এই দশকে, যে দশক মুক্তির দশকে পরিণত হতে চলেছে সেই দশকে, ব্রতী হাজার চুরাশি হয়ে গেল! অথবা কি করতেন তিনি, অথচ করেন নি বলে ব্রতী হাজার চুরাশি হয়ে গেল? কোথায় সুজাতা ব্যর্থ হয়েছিলেন?
158
159 ১৭
160 দিব্যনাথ ব্রতীকে সহ্য করতে পারতেন নাবলতেন,
161 মাদার্স চাইল্ড! তুমি ওকেই শিখিয়েছ আমার শত্রু হতে
162 সুজাতা অবাক হয়ে যেতেনকেন তিনি ব্রতীকে বলতে যাবেন তোর বাবার শত্রু ’? কেন বলবেন? দিব্যনাথ কি সুজাতার শত্রু? দিব্যনাথ যাতে যাতে বিশ্বাস করেন, সেই সম্ভ্রান্ততায়, সচ্ছলতায়, নিরাপত্তায় সুজাতাও বিশ্বাস করেনবিশ্বাস করেন কিনা সুজাতা কখনো সে প্রশ্ন নিজেকে করেন নিকরেন নি যখন, তখন নিশ্চয় তাঁর কোন প্রশ্নই ছিল না
163 সুজাতা বড়ঘরের মেয়েঅত্যন্ত রক্ষণশীল পরিবার তাঁদেরলোরেটোয় পড়ানো বি. . পাস করানো সবই বিয়ের জন্যেছেলের অবস্থা খারাপ, জেনেশুনেই তাঁকে বড়ঘরের ছেলে দিব্যনাথের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়সুজাতার বাবা জানতেন দিব্যনাথ অনেক ওপরে যাবেন
164 এই বাড়ি, সচ্ছলতা, নিরাপত্তা, এতে সুজাতাও বিশ্বাস করেনঅতএব দিব্যনাথের অভিযোগ মিথ্যে
165 যদি দিব্যনাথের অভিযোগ মিথ্যে হয়, তাহলে শুধু এই প্রমাণ হয় যে, সুজাতা ব্রতীকে দিব্যনাথের শত্রু হতে বলেন নি প্রমাণ হয় না যে ব্রতী ওর বাবাকে শত্রু ভাবেব্রতী যে দিব্যনাথকে সহ্য করতে পারে না সে সুজাতাও জানেনভাল করেই জানেন
166 কেন, ব্রতী?
167 দিব্যনাথ চ্যাটার্জি একক ব্যক্তি হিসেবে আমার শত্রু নন
168 তবে?
169 উনি যে সব বস্তু মূল্যে বিশ্বাস করেন, সেগুলোতেও অন্য বহুজনও বিশ্বাস করেএই মূল্যবোধ যারা লালন করছেন, সেই শ্রেণীটাই আমার শত্রুউনি সেই শ্রেণীরই একজন
170 কি বলিস তুই ব্রতী? বুঝি না
171 বুঝতে চেষ্টা করছ কেন? বোতামটা লাগাও না
172 ব্রতী, তুই খুব অন্যরকম হয়ে যাচ্ছিস
173
174 ১৮
175 কি রকম?
176 বদলে যাচ্ছিস
177 বদলাব না?
178 কোথায় ঘুরিস সারাদিন?
179 আড্ডা দিই
180 কাদের সঙ্গে?
181 বন্ধুদের
182 নে তোর জামাবোতাম লাগাতে বললি তাই মার দুটো কথা বলার সময় হল
183 ব্রতী কথা বলে নিচোখ কুঁচকে হেসেছিলওর হাসিতে কথা বলার ভঙ্গিতে কি যেন এসে যাচ্ছিল ক্রমাগতসহিষ্ণুতা, ধৈর্যযেন সুজাতা কথা বলার আগেভাগেই জানে ওর কথা সুজাতা বুঝবেন নাওঁর সঙ্গে কথা বলত যেন ওর বাবা, সুজাতা ওর ছোট মেয়েওঁকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে ছেলে ভোলাচ্ছে ব্রতীসুজাতা বুঝতে পারছিলেন ব্রতী ওঁর অজানা হয়ে যাচ্ছে ক্রমে, অচেনাতখন মনে দুঃখ হয়েছে খুবকেন মনে আশঙ্কা হয় নি? ভয় হয় নি?
184 কেন মনে হয় নি মার কাছে ছেলে ক্রমেই অচেনা হয়ে যায়, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এক বাড়িতে বাস করেও, থেকে ভীষণ বিপদ হতে পারে একদিন?
185 ব্রতীর ঘরে দাঁড়িয়ে সুজাতা ভুরু কুঁচকে ভেবেছিলেন, আর ভেবেছিলেন
186 ব্রতী যদি সুজাতার দাদার মত দুরারোগ্য অসুখে মারা যেত, তাহলেও মৃত্যুর পর প্রশ্ন থাকতে পারত মনেসে প্রশ্নগুলো এইরকম হতডাক্তারের কোন ত্রুটি হল, না বাড়ির লোকের? ডাক্তারকে না ডেকে ডাক্তারকে ডাকলে কি হত? ওষুধ না দিয়ে অন্য ওষুধ দিলে কি হত? ব্যাধিজনিত1 মৃত্যুর পরবর্তী প্রশ্নগুলো এই রকমই হয়ে থাকে
187 ব্রতী যদি দুর্ঘটনায় মরত তাহলে আগে প্রশ্ন হত, যে ধরনের দুর্ঘটনা ঘটল, তা ব্রতী সাবধান হলে, এড়ানো যেত কিনা! তারপর প্রশ্ন হত, যে পরিস্থিতিতে
188
189 ১৯
190 দুর্ঘটনা ঘটল, তা কোন ভাবে এড়ানো যেত কিনা! সুজাতার যদি দিব্যনাথের মত কোষ্ঠীতে বিশ্বাস থাকত তবে প্রশ্ন হত কোষ্ঠীতে দুর্ঘটনাজনিত1 মৃত্যুর কোন ইঙ্গিত ছিল কিনা! ইঙ্গিত থাকলে তা প্রতিরোধের কোন নিদান ছিল কিনা!
191 ব্রতী যদি দণ্ডনীয় কোন দুরপরাধ1 করতে গিয়ে নিহত হত, তাহলে প্রশ্ন হত বাড়ির ছেলে হয়ে কার দোষে, কোন সঙ্গে পড়ে ব্রতী অপরাধী হল! কোন কোন প্রতিষেধক ব্যবস্থা করলে ব্রতীর এই পরিণতি এড়ানো যেত!
192 ব্রতী এর কোন কোঠাতেই পড়ে নাঅপরাধের মধ্যে ব্রতী এই সমাজে, এই ব্যবস্থায় বিশ্বাস হারিয়েছিলব্রতীর মনে হয়েছিল যে পথ ধরে সমাজ রাষ্ট্র চলেছে সে পথে মুক্তি আসবে নাঅপরাধের মধ্যে ব্রতী শুধু স্লোগান লেখেনি, স্লোগানে বিশ্বাসও করেছিলব্রতীর মুখাগ্নি পর্যন্ত দিব্যনাথ জ্যোতি করেন নিব্রতী এমনই সমাজবিরোধী যে ব্রতীদের লাশ কাঁটাপুকুরে পড়ে থাকেরাত হলে পুলিশী হেফাজতে গাদাই হয়ে শ্মশানে আসেতারপর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়
193 রাতে লাশ জ্বলেযারা শ্রাদ্ধশান্তিতে বিশ্বাসী, তারাও শাস্ত্রের নিয়মে সকালে শ্রাদ্ধ করতে পারে নাতাদের বসে থাকতে হয় লাল, স্ফীত চোখে সারাদিনতারপর রাতে একটা ঘেটোবামুনের1 দোর ধরতে হয়
194 বামুনটা মাথা পিছু থোক টাকা নিয়ে রাতেভিতে1 শ্রাদ্ধ সেরে দেয় ঝটপট
195 ব্রতী স্লোগান লিখেছিলপুলিশ যখন ওর ঘর তল্লাশ করে তখন সুজাতা দেখেছিলেন স্লোগানের বয়ান সবব্রতীর হাতে লেখা
196 কেননা জেলই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়
197 বন্দুকের নল থেকেই....
198 এই দশক মুক্তির দশকে পরিণত হতে চলেছে....
199 ঘৃণা করুন! চিহ্নিত করুন! চূর্ণ করুন মধ্যপন্থীকে
200 আজ ইয়েনানে পরিণত হতে চলেছে
201 শুনেছিলেন ব্রতীরা বয়ান লেখে, তারপর দেওয়ালে লেখেরাতেভিতে
202
203 ২০
204 অন্ধকারে লেখেআবার কালুর মত মরিয়া হলে বেলা এগারোটায়, পুলিশ পাহারায় যখন পাড়া ঘেরাও, রাস্তায় যখন তপনের রক্ত শুকোয় নি, তখনই লালরঙের1 পোঁচড়া টেনে সম্ভ্রান্ত কোন বাড়ির পরিষ্কার দেওয়ালে লেখা, লাল বাংলার লাল কমরেড লাল তপনের লালরক্তে...বাজার পুড়িয়ে মা...
205 লিখতে লিখতে কালুও গুলি খায় বলে শেষ শব্দটা শেষ হয় নাওই রকমই থেকে যায়
206 ব্রতীরা এই এক নতুন জাতের ছেলেস্লোগান লিখলে বুলেট ছুটে আসে জেনেও ব্রতীরা স্লোগান লেখেকাঁটাপুকুর যাবার জন্যে হুড়োহুড়ি লাগিয়ে দেয়
207 সুজাতা ব্রতীকে কোন রকম অপরাধীর কোঠাতে ফেলতে পারেন নি?
208 ব্রতীর জন্যে, কাঁদতে কাঁদতেই জ্যোতি দিব্যনাথ তাঁকে বুঝিয়েছিলেন, সমাজ বড় বড় হত্যাকারী, যারা খাবারে-ওষুধ, শিশু-খাদ্যে ভেজাল মেলায় তারা বেঁচে থাকতে পারে সমাজে নেতারা গ্রামের জনগণকে পুলিশের গুলির মুখে ঠেলে দিয়ে বাড়ি গাড়ি পুলিশ পাহারায় নিরাপদ আশ্রয়ে বেঁচে থাকতে পারেকিন্তু ব্রতী তাদের চেয়ে বড় অপরাধীকেননা সে এই মুনাফাখোর ব্যবসায়ী স্বার্থান্ধ নেতাদের ওপর বিশ্বাস হারিয়েছিলএই বিশ্বাসহীনতা যে বালক, কিশোর বা যুবকের মনে ঢুকে যায়, তার বয়স বারষোলবাইশ যাই হক, তার শাস্তি নিশ্চিত মৃত্যু
209 তার এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিত মৃত্যুযারা মেরুদণ্ডহীন, সুবিধাবাদীহাওয়া বদল বুঝে মত বদলানো শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীর সমাজকে বর্জন করে
210 তাদের শাস্তি মৃত্যুসবাই তাদের হত্যা করতে পারেসব দল মতের লোকেদের এই দলছাড়া তরুণের হত্যা করার নির্বাধ গণতান্ত্রিক অধিকার আছেআইন, অনুমতি, বিচার লাগে না
211 একা অথবা যূথবদ্ধভাবে1 এই বিশ্বাসহীন তরুণদের হত্যা করা চলেবুলেট-ছুরি-দা-বর্শা-সড়কি যে কোন অস্ত্রে যে কোন সময়ে শহরের যে কোন অঞ্চলে, যে কোন দর্শক বা দর্শকদের সামনে
212
213 ২১
214 জ্যোতি আর দিব্যনাথ এসব কথা সুজাতাকে পাখিপড়া করে বোঝানকিন্তু সুজাতা মাথা নেড়েছিলেন
215 না
216 ব্রতীর মৃত্যুর আগের প্রশ্ন হল কেন ব্রতী বিশ্বাসহীনতার ব্রতকে প্রচণ্ড বিশ্বাস করেছিল?
217 ওর মৃত্যুর পরের প্রশ্ন হল ব্রতী চ্যাটার্জীর ফাইল বন্ধ হল বটে কিন্তু ওকে হত্যা করে কি সেই বিশ্বাসহীনতার প্রজ্বলন্ত বিশ্বাসকে শেষ করে দেওয়া গেল? ব্রতী নেই, ব্রতীরা নেইতাতেই কি শেষ হয়ে গেল সব?
218 প্রশ্ন হল ব্রতীর মৃত্যু কি নিরর্থক? ওর মৃত্যুর মানে কি তবে একটা বিরাটনা’?
219 সব কী অলীক ছিল? অনস্তিত্ব? ওর বিশ্বাস? ওর ভয়হীনতা? ওর দুর্বার আবেগ? মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সমু, বিজিত, পার্থ আর লালটুকে সাবধান করবার জন্যেই ষোলই জানুআরি নীল শার্ট পরে সুজাতাকে ছেলে ভুলিয়ে বেরিয়ে যাওয়া? যাবার আগে হঠাৎ সুজাতার দিকে তাকানো? দেখে নেওয়া? সুজাতার সুন্দর অভিজাত, প্রৌঢ় মুখের প্রতিটি বেদনার রেখা দেখে মনে এঁকে নেওয়া?
220 সুজাতা মাথা নেড়েছিলেনঘর বন্ধ করে বেরিয়ে এসেছিলেনচাবিটা সেদিন থেকে ওঁর কাছেই থাকেওঁর ব্যাগেআর দুবছর ধরে রাতে উঠে আসেন সুজাতা! ব্রতীর ঘর ঝাঁট দেন, ধুলো ঝাড়েনবিছানা আবার পেতেছেন সুজাতাজুতো রেখেছেন আলনার নীচেজামাকাপড় গুছিয়েছেনতাঁর মত হাজার ছেলের মা সকলকে লুকিয়ে ছেলের জামায় হাত বোলায়, ছেলের ছবিতে আঙুল বোলায়?
221 ব্রতীর ঘরে বসে থাকেন সুজাতামনে মনে ব্রতীর সঙ্গে কথা বলেনচোখ বুজে ভাবেন ব্রতী কাছে আছেভাবেন কত মা কত ছেলেকে এমনি করে লুকিয়ে কাছে ডাকে, কাছে পেতে চায়?
222 ব্রতীর সঙ্গে কথা বলেন সুজাতাকখনো ব্রতী উত্তর দেয়, কখনো দেয় না
223
224 ২২
225 জ্যোতির ঘরে টেলিফোন বাজছেওটা ধরতে গিয়েই এত কথা মনে পড়ল সুজাতার
226 সমু আর লালটু, বিজিত আর পার্থর বাড়িতে টেলিফোন নেইটেলিফোন বাজিয়ে ওদের বাড়ির লোকের ঘুম ভাঙাবে নাআজ সমু, বিজিত আর পার্থের মা কি ভাবছেন? আজ সকালে?
227 বিনি শ্লথ পায়ে নাইলনের নাইটি পরে দরজা খুলে দিলওর চোখে মুখে বিরক্তিএত তাড়াতাড়ি বিনি ঘুম থেকে উঠতে চায় নাওর ঘুম ভাঙে না
228 নিয়মিত ঘুম আর বিশ্রাম জ্যোতি আর বিনির খুবই দরকারঅত্যন্ত প্রেমাসক্ত সুজাতার বড়ছেলে আর বউসুমনের আটমাস বয়স থেকেই অবশ্য ওদের খাট বিছানা আলাদা, তবু ওরা অত্যন্ত প্রেমাসক্ত দম্পতি বলে নাম আছেরক্তমাংসের সুখকে সুজাতা খুব দামী বলে জানতেনবিনিরা রক্তমাংসের সুখকে প্রেম থেকে ব্যবচ্ছিন্ন করে রেখেছে
229 ওদের প্রেম অন্যরকমওদের বিবাহবার্ষিকীতে খুব উদ্দাম পার্টি হয়একসঙ্গে ঘোরে দুজনে, বেড়াতে যায়সুজাতা শুনেছেন বিনি ক্লাবে গেলে জ্যোতি ছাড়া কারো সঙ্গে নাচে নাফলে সমাজে বিনির খুব সুনামসুজাতা ফোন তুললেন,
230 কে?
231 আমি নন্দিনী
232 নন্দিনী!
233 হ্যাঁ, আমি ফিরে এসেছি
234 কবে?
235 পরশু
236
237 আপনার সঙ্গে আমার একবার দেখা হওয়া দরকারআপনার ওখানে আমি যাব নাআপনি কি ব্যাঙ্কে যাবেন আজ?
238 আজ আমি যাব না নন্দিনীআজ আমার ছোটমেয়ে তুলির এনগেজমেন্ট
239
240 ২৩
241 তাহলে?
242 তুমি বল কোথায় গেলে দেখা হবেঠিক সন্ধ্যাটা বাদ দিয়ে আমি অন্যসময় যেতে পারি
243 চারটের সময়?
244 যেতে পারিকোথায় যাব বল?
245 একটা ঠিকানা দিচ্ছিআপনার বাড়ি থেকে বেশি দূর হবে না
246 বল
247 নন্দিনী ঠিকানা বললসুজাতা ফোন নামিয়ে রাখলেননন্দিনী! ব্রতী নন্দিনীকে ভালবাসতকিন্তু নন্দিনীকে কখনো দেখেন নি সুজাতা
248 জ্যোতির দিকে তাকালেনঘুমোলে, একমাত্র ঘুমোলেই জ্যোতির মুখে সুজাতা ব্রতীর মুখের আদল দেখতে পান
249 বেরিয়ে এলেন বারান্দায়বারান্দায় বেরোতেই বেশ শীতশীত করল! নন্দিনী আর ব্রতী কি একটা কবিতার কাগজ বের করেছিল? ওরা একসঙ্গে নাটক করেছিল, সুজাতার জলবসন্ত হয়, তাই যাওয়া হয় নিবাড়ি থেকে আর কেউই যায় নিশুধু হেম বলেছিল, ছোটোখোকা1 অনেক হাততালি পেয়েছে, জানলে গো মাসবাই খুব সুখ্যেত2 করেছে
250 হেমই গল্প করত ব্রতীর সঙ্গেসুজাতার কাছে যখন ব্রতী অচেনা হয়ে যাচ্ছিল, মাঝে মাঝে ওর মুখ দেখে সুজাতা কথা বলতেও ভয় পেতেন, তখনো হেম বলতে পারত, রাজকাজজিতে1 যাচ্ছ তা জানি, এটুকু খেয়ে উদ্ধার করে যাও বাপু
251 সেই যে দীঘা যাচ্ছি, বলে ব্রতী দীঘার পথে বাস থেকে নেমে অন্য জায়গায় যায়, হেমই তখন ওর স্যুটকেস গোছগাছ করে দিয়েছিল
252 হেম বলেছিল ছোটখোকার সঙ্গে এট্টা1 মেয়ের ভাব আছে গো মা! ঠাকুর দেখে এয়েছে2ছোটখোকা বেরুলে3 মেয়েটা পথের ধারে দাঁইড়ে4 থাকেতা বাদে দুজনা একসঙ্গে চলে যায়মেয়েটা কালোপানা5
253
254 ২৪
255 সেই নন্দিনী! সুজাতার বুক ধড়ফড় করছে কেন? ব্যারালগান খেয়ে বেশি সময় শুয়ে থাকেন নি বলেনন্দিনী ফোন করেছে বলে?
256 বাথরুম থেকে সেজেগুজে বেরিয়ে এল বিনিঘাড় অবধি ছাঁটা রুক্ষ চুল নীল শাড়ীর ওপর নীল নাইলনের কার্ডিগানরঙে রং মিলিয়ে পরতে কখনো ভুল হয় না বিনিরদীপার হয় না, তুলিরও হয় নাবিনিকে বেশ স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে
257 কে ফোন করেছিল মা?
258 নন্দিনী
259 নন্দিনী!
260 ব্রতীর বন্ধু
261 বিনির মুখ কৌতুহলে ভরে গেল
262 নিচে যাচ্ছ কেন মা?
263 কি হবে না হবে দেখি! তুমি সুমনকে তোলওর ইস্কুল আছেবাস আসবে
264 নিচে তুলিই গেছে
265 সুজাতা হাসলেনআজ তুলির এনগেজমেন্টআজও বিশ্বাস করতে পারে না গিয়ে তদারক না করলেও বাড়িতে সকালের চা ব্রেকফাস্ট, দুপুরের রান্না, বিকেলের ঘর সাজানো সব হবে কাউকে বিশ্বাস করে না তুলি
266 ষোল বৎসর বয়সে ক্রাফ্ট শিখতে গেল তুলি লেখাপড়া ছেড়েইসেই সময় থেকেই সংসারের ভার নিলআসলে সি. . ফার্ম দাঁড়িয়ে যাবার পর দিব্যনাথ সুজাতাকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলেছিলেনসুজাতা শোনেন নিশাশুড়ি জীবিত ছিলেন ব্রতীর আটবছর অবধিততদিন পর্যন্ত সুজাতার একখানা কাপড় নিজের শখে কিনবার অধিকার ছিল না
267 সেই জন্য, এই ব্যাঙ্কে যাওয়া আসা, নিজের মত নিজের একটা জীবন খুঁজে পাওয়া, সবকিছু অত্যন্ত দামী হয়ে ওঠে সুজাতার কাছেতাই উনি কাজ ছাড়েন নি
268
269 ২৫
270 তুলি ওর ঠাক্‌মার চেহারা স্বভাব পেয়েছেসুজাতা যে কাজ ছাড়েন নি সে জন্যে ওর বাবা আর ঠাক্‌মার খুব রাগ হয়আসলে সুজাতা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে চান, ঘর সংসার তাঁর ভাল লাগে না, ভাল লাগে না ছেলেমেয়ের বোঝা, এসব কথা মা ছেলে সব সময় বলতেন
271 তুলিও বলত, এখনো বলে, যে বাড়ির গিন্নি দিনে দশঘণ্টা বাইরে থাকেন, সে বাড়ির মেয়েকে বাধ্য হয়েই করতে হয় সবআমি না করলে কোন কাজ হয়?
272 সর্বদা অসন্তুষ্ট তুলি, অপ্রসন্নএকটু চা ঢালা, কি রান্না হবে বলে দেওয়া -সব কাজ করে শহীদের মত মুখ করেআশা করা যায় বিয়ে হলে ওর স্বভাব শুধরে যাবে
273 ক্রাফ্ট শেখবার পর বন্ধুর সঙ্গে শাড়ি ছাপাবার দোকান করতে গিয়েছিল তুলিসেই সূত্রে টোনি কাপাডিয়ার সঙ্গে আলাপ হয়আজ ব্রতীর জন্মদিনে তুলির এনগেজমেন্ট ঘোষণা করবার সিদ্ধান্তটা টোনির মারমিসেস কাপাডিয়ার গুরু সোয়ামীজি1 আমেরিকায় থাকেনতিনি জানিয়েছেন এই দিনটিই প্রশস্ততাঁর ক্যালেণ্ডারেসোয়ামীর শিষ্যরা সোয়ামীর ক্যালেণ্ডার মেনে চলেনসে ক্যালেণ্ডারে কোন ছুটিছাটা নেইতিনশো পঁয়ষট্টি দিনই হল কর্ম এবং ধ্যানের দিনটোনির কথা ভাবতে গিয়ে দিব্যনাথ বা তুলি সুজাতার মত নিতে ভুলে যায়
1Swami-ji
274 নিচে নামতেই সুজাতা বুঝলেন তুলি বহুক্ষণ ওঁর সঙ্গে মনে মনে ঝগড়া করছেআজ, ওর জীবনের একটা বিশেষ দিনকিন্তু সুজাতা যেন দিনটাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না, তাই ওর রাগ
275 তুমি কি খাবে মা?
276 একটু লেবুজল
277 কেন? ব্যথা বেড়েছে?
278 নাএখন আর নেই
279 জানি না তুমি এরকম চান্স নিচ্ছ কেনঅ্যাপেনডিক্স অপারেশন আজকাল এখন ডালভাত
280
281 ২৬
282 সবসময় নয়অ্যাপেনডিক্স অপারেশন হওয়া উচিত ইলেক্টিভ1অ্যাপেনডিক্সকে ফুলতে বা পেকে উঠতে না দিয়ে অল্পস্বল্প ব্যথা হলেই কেটে ফেলা উচিতসুজাতার ক্ষেত্রে তা হয়নিতাছাড়া ডাক্তার সন্দেহ করেন সুজাতার অ্যাপেনডিক্স হয়ত গ্যাংগ্রীনাস2সময়ে না কাটলে গ্যাংগ্রীন দাঁড়াতে পারেফেটে গেলেও বিপদ হতে পারেঅথচ সুজাতার হার্ট তেমন সবল নয়শরীর রক্তশূন্য, তাই অপারেশন করা ঠিক এই মুহূর্তে সম্ভব নয়কালই সুজাতা এসব কথা জেনে এসেছেনতবে তুলিকে সে কথা বললেন নাবললেন,
1elective
2gangrenous
283 করাব অপারেশন
284 কবে?
285 তোর বিয়েটা হয়ে যাক
286 বিয়ে এপ্রিলে হবে
287 হয়ত তার আগেই করাবহেম! হেম!
288 কেন মা?
289 আমায় একটু লেবুজল দিও
290 সুজাতা টেবিলে বসলেন
291 এত ভোরে কে ফোন করেছিল?
292 নন্দিনী
293 তুলির মুখ লাল হলভুরু কুঁচকে গেল অসন্তোষে ঘটাং ঘটাং করে টি-পটের1 ভেতরে চামচ নেড়ে দেখল লিকার কতটা গাঢ় হলতারপর বলল, একটা ঘণ্টা বাজাবার নিয়ম করলে পারসবাই একসময়ে চা খেয়ে যাবেযার যখন ইচ্ছে আসে এতে লোকজনের কষ্ট আমারও অসুবিধে
1teapot-এর
294 সুজাতা কৌতূহলে দেখতে লাগলেন তুলিকেঠিক এইরকম গলায় কথা বলতেন শাশুড়িশাশুড়ি ছেলেমেয়েদের আরাম করা, ইচ্ছেমতন গল্প করে খাওয়া, এসব দেখতে পারতেন নাসর্বদা তাড়না করতেন অসন্তোষে, বিরক্তিতেসবাই তাঁর অনুশাসন মেনে নিয়েছিলএকা ব্রতী সেই শৈশবেও তাঁর শাসন
295
296 ২৭
297 মানে নিদেরি করে ঘুম থেকে উঠতনিয়মমাফিক টেবিল থেকে খাবার তুলে ফেলা হতব্রতী রান্নাঘরে গিয়ে হেমের কাছে পিঁড়িতে বসে খাবার খেয়ে নিত
298 আশ্চর্য বাড়ি! আশ্চর্য ডিসিপ্লিন!
299 তুলি চাপা অসন্তোষে বললএখনি এই আটাশ বছর বয়সেই এত অসন্তোষ তুলির! এখনো জীবনের কতখানি পড়ে আছে সামনে
300 জ্যোতি রাত করে শোয়, ওকে তাড়াতাড়ি তুলে কি হবে? তোর বাবা চা খান নাঘোল খাবেন...
301 সে আমি ওঁর ম্যাসাজিস্ট চলে গেলেই পাঠিয়ে দিয়েছিবাবার কথা হচ্ছে না
302 বিনি ঠাকুরঘরে ফুল-জল দিয়ে আসছে
303 যতসব ন্যাকামি
304 ন্যাকামি কেন হবে? তোর ঠাকুরমা নিয়মিত পুজোপাঠ করতেনআমার ভাল লাগত নানিয়মরক্ষে1 দুটো ফুল ফেলে দিতামবিনির ভাল লাগে, পুজো করেএতে ন্যাকামি কোথায় দেখলি?
305 জানি না বাবাবিলেতে জন্ম, সেখানে ষোলবছর অব্দি কাটিয়ে এত ভক্তি কোথা থেকে আসে জানি না
306 বিলেতে ওর বাবা বাড়ি করেছিল, সেখানে থাকতবিলেতে বড় হওয়ার সঙ্গে ঠাকুরঘরে ফুল-জল দেওয়ার কি বিরোধ আছে কোন? আমি দেখতে পাই না
307 ভক্তি থাকলে বুঝতামওর কাছে ঠাকুরঘরটা একটা ইনটেরিয়র ডেকরেশন
308 তুই তো সোয়ামীর মন্দিরে যাস পার্ক স্ট্রীটে
309 সেটা অন্য জিনিস মা
310 আমার মনে হয় নাযার যাতে বিশ্বাস করতে ভাল লাগে সে তাই বিশ্বাস করছেতা বলে অন্যের বিশ্বাসটা ন্যাকামি, নিজের বিশ্বাসটা খাঁটি, তা হবে কেন?
311
312 ২৮
313 ব্রতীও বলতঅন্যদের বিশ্বাসকে ব্যঙ্গ করত
314 তোর সোয়ামীতে বিশ্বাস, বিনির ঠাকুরঘরে বিশ্বাস, দুটো মোটামুটি এক ধরনের জিনিসব্রতী যা বিশ্বাস করত, তার সঙ্গে অন্যদের বিশ্বাসে তফাত ছিল তুলিব্রতী ব্যঙ্গ করত বলেও আমার মনে পড়ছে নাতর্ক করত বলতে পারিসতর্কে হেরে গেলে তুই রেগে যেতিসরাগিয়ে দিয়ে মজা পেত
315 বিশ্বাস করত বলছ কেন মা? বিশ্বাস ওর ছিল না
316 তুলি! আমি ব্রতীর কথা তোর সঙ্গে আলোচনা করব না
317 কেন?
318 লাভ কি? তুই ব্রতীকে জানিস না
319 এখনো তুমি...
320 তুলি! চুপ কর
321 সুজাতার হাত কেঁপে গেলগেলাসটা নামালেনকয়েকটি অসহ মুহূর্ততারপর নিজেকে সামলে নিয়ে সুজাতা বললেন, বিনিকে চা খেতে আসতে বল হেম
322 তুলি, তাঁর আত্মজা, তাঁর দিকে অপরিচিত, হিংস্র চোখে তাকালঅচেনা গলায় বলল,
323 আজ ভল্ট থেকে গয়না কি আমাকেই আনতে হবে?
324 আমি যাব
325 বিকেলে কি তুমি বাড়ি থাকবে?
326 থাকব
327 আশাকরি আজ তুমি টোনির বন্ধুদের সঙ্গে একটু সহজ ব্যবহার করবে
328 তোমরা কি, তোমরা কি সরোজকেও ডাকছ?
329 ডেকেছিআসবে কিনা জানি না
330 সরোজকে!
331 সরোজ পালসরোজ পাল, তোমার ক্ষমা নেইঅক্ষম, অক্ষম আস্ফালন
332
333 ২৯
334 দুবছর ধরে সরোজ পাল এই ব্যাপক তদন্ত তল্লাসী শাস্তিবিধানের ভার লইয়াছেনতাঁহার অসামান্য কর্মদক্ষতা নির্ভীকতার জন্য—।’
335 মুক্তির দশক, মুক্তির দশক! সরোজ পাল শান্ত্রীদের যূথবদ্ধ করছেযূথপতির মত নির্দেশ, শ্যামা মা একবার রক্ত চানসরোজ পালসুন্দর চেহারা, সুন্দর হাসি, সুন্দর উচ্চারণ, ইয়েস মিস্টার চ্যাটার্জি আই কোয়াইট অ্যাসিওর ইউমিসেস চ্যাটার্জি, আমি জানি, আমারও মা আছেনসরোজ পালইয়েস, সার্চ দ্য রুমনা মিসেস চ্যাটার্জী, আপনার ছেলে সন্তান হয়ে মার কাছে মিছে বলেছিলদীঘায় যায় নিব্রোক হিজ জার্নিমিসগাইডেড ইয়ূথইয়েস ক্যানসারাস গ্রোথ অন দ্য বডি অফ ডেমোক্রেসিনা মিঃ চ্যাটার্জী, কোন কাগজে বেরোবে নাআপনি টোনির ভাবি শ্বশুর, টোনি আমার....সরোজ পাল
336 তুমি সুজাতাকে দেখেছ!
337 এনাফ ইজ এনাফ মা! আজ দুবছর ধরে বাড়িটাকে তুমি কবর করে রেখেছবাবা তোমার সামনে মুখ খোলেন নাদাদা অপরাধীর মত...এরকম একটা ঘটনা ঘটে গেলে সবাই সেটা চাপা দিতে চেষ্টা করেসেটাই স্বাভাবিকব্রতী ইজ ডেডইউ মাস্ট থিংক অব দ্য লিভিংতুমি...
338 অত তাড়াতাড়ি চাপা দিতে চেষ্টা করে? লাশ সনাক্ত করবারও আগেটেলিফোনে খবর পাবার সঙ্গে সঙ্গে বাপের মনে হয় না ছুটে চলে যাই? আগে মনে হয় গাড়িটা কাঁটাপুকুরের সামনে দাঁড় করানো উচিত হবে?
339 নাকি টেলিফোন আসবার অনেক আগেই ব্রতী ওর বাবা দাদার কাছে মরে গিয়েছিলতাই সুজাতা অবিশ্বাস করেছিলেন, ওরা অবিশ্বাস করে নি? তাই দুজনেই ছুটে বেরিয়ে গিয়েছিল খবরটা চেপে দেবার জন্য ধরাধরি করতে
340 সহসা সুজাতার মনে হল একটা উদ্ভট নাটকতাঁরা সবাই নাটকের পাত্র-পাত্রী
341 যদিও ব্রতী বাড়ির ছেলে, তবু সে নৃশংস হিংস্রভাবে1 নিহত হলে তার
342
343 ৩০
344 বাপ, দাদা, দিদিরা আপন আপন সমাজের কাছে কিভাবে সে মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করবে, কি অসুবিধেয় পড়বে, সেকথা ব্রতী ভাবেনি বলে সুশৃঙ্খল সাজানো জীবনে ব্যাঘাত ঘটেছেব্যাঘাত ঘটেছে যার জন্যে, সে এখন মৃতএখন এরা সুজাতাকে মনে মনে ব্রতীর দলে ফেলেছে! নিজেরা একটা আলাদা দল করছে
345 হাজার হলেও বাপ, দাদা, দিদিদের পক্ষে একথা বলা কষ্টকর
346 দেখুন আমার ছেলে ছিল
347 সি, মাই ব্রাদার ওয়াজ
348 আমার ছোট ভাই একটা
349 টোনি, ব্রতী—!
350 সুজাতাকে ওরা বিপক্ষ দলে ফেলেছেকেননা সুজাতা কোন সময়েই তাঁর সুশৃঙ্খল জীবন বিপর্যস্ত হল এজন্যে ব্রতীকে দোষ দেন নিদোষ দেন নি, বুক চাপড়ে কাঁদেন নি, এদের কারো বুকে মাথা রেখে আকুল হন নিপ্রথমেই তাঁর মনে হয়েছে যারা আগে নিজের কথা ভাবে, তাদের কাছে ব্রতীর কথা বলে তিনি সান্ত্বনা খুঁজবেন নাব্রতীর বাবা, দিদিদের চেয়ে হেমকে তাঁর আপন মনে হয়েছে
351 সুজাতার একথাও মনে হল, ব্রতী যেদিন থেকে বদলে যেতে শুরু করে, সেদিন থেকেই এরা ব্রতীকে বিপক্ষ দলে ফেলে দেয় মনে মনেএরা যা যা করে, ব্রতী তা করত নাবড় হলে উত্তর-জীবনেও ব্রতী তা করত না, এরা তা জানেঅতএব ব্রতী অন্য শিবিরের বাসিন্দা!
352 ব্রতী যদি জ্যোতির মত প্রচুর মদ খেত, নীপার বরের মত মাতলামি করত, ব্রতীর বাবা যেমন সেদিনও এক টাইপিস্ট মেয়েকে নিয়ে ঢলাঢলি করেছেন, তাই করত, ঝানু জোচ্চোর হত টোনি কাপাডিয়ার মত, দুশ্চরিত্র হত ওর দিদি নীপার মত, যে এক পিসতুত দেওরের সঙ্গে প্রায় বসবাস করে; তাহলে ওরা ব্রতীকে বিপক্ষ মনে করত না
353 অন্ততঃ ওরা যদি ব্রতীকে দেখে ভরসা পেত, যে বড় হয়ে ব্রতী ওদের মতই হবে, তাহলেও ওরা ব্রতীকে বিপক্ষ মনে করত না
354 ব্রতী এর কোনটা করার দিকে প্রবণতা দেখায় নিস্বামী, সন্তান, জামাই
355
356 ৩১
357 সবাই এসব করছে বলে সুজাতাও কোনদিন মনে করেন নি, তিনি বিশেষ করে অসুখীপ্রথমত, যা ঘটে তা মেনে নেন, ওই তাঁর শিক্ষা, জীবন থেকে পাওয়াদ্বিতীয়ত, তাঁর কোনদিন মনে প্রশ্ন ওঠে না, প্রশ্ন করবার নৈতিক অধিকার যে তাঁরও আছে, তা সুজাতা জানেন নাদুঃখ পেয়েছেন, খুব দুঃখ পেয়েছেনদিব্যনাথ চিরকাল বাইরে মেয়েদের নিয়ে নোংরামি করেছেনশাশুড়ির তাতে সস্নেহ প্রশ্রয় ছিলতাঁর ছেলে পুরুষ বাচ্চা, তাঁর ছেলে স্ত্রৈণ নয়সুজাতা দুঃখ পেয়েছেন তারপর ভেবেছেন পৃথিবীতে নিরবচ্ছিন্ন সুখী কে হয়?
358 কিন্তু ব্রতী অন্যরকম ছিলখুব ছোটবেলাতেও ওকে মিথ্যে বলে ভোলানো যায় নিযুক্তি দিয়ে বোঝালে কথা শুনতশুনতে হবে বলে দাবড়ালে কথা শুনত না যখন বড় হতে থাকল, তখন ওর মধ্যে সুজাতা স্বামী অন্য সন্তানদের চেয়ে সম্পূর্ণ পৃথক একটা মানবজগৎ1 দেখতে পেলেন
359 ওর সঙ্গে বই পড়ে, ওকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় বেড়িয়ে, ওর বন্ধুদের বাড়িতে ডেকে গল্পগুজব করে সুজাতা ক্রমেই ওর মধ্যে ডুবে যেতে লাগলেনব্রতীই যেন ওঁর বেঁচে থাকার একমাত্র ন্যায়সঙ্গত ব্যাখ্যা হয়ে দাঁড়ালসম্ভবত, সম্ভবত ব্রতীর বিষয়ে সুজাতা অত্যন্ত অধিকারপ্রবণ হয়ে পড়েন
360 একা ব্রতীর জন্যে সুজাতা স্বামীকে, শাশুড়িকে অমান্য করেছেনঅর্থহীন শাসন, আর স্বেচ্ছাচারী প্রশ্রয়, যা অন্য সন্তানেরা ভোগ করেছে তা ব্রতীকে ভোগ করতে দেন নিঅন্য সন্তানদের শাশুড়ি সম্পূর্ণরূপে অধিকার করেছিলেনব্রতীর বেলা সুজাতা দখল ছাড়েন নিবেশি জেদি, বেশি অনুভূতিপ্রবণ, বেশি কল্পনাপ্রবণ ব্রতীকে সুজাতা ছায়ায় মায়ায় বড় করেছিলেনস্বামী শাশুড়ির আধিপত্যের উত্তাপ থেকে ব্রতীকে বাঁচিয়ে চলার জন্যে সুজাতাকে খুব কষ্ট করতে হয়েছিল
361 সেই জন্যেই কি এরা এখনও ক্ষমাহীন? না ব্রতীর বিষয়ে এদের মনে মনে কোন পাপবোধ আছে? সেটা ঢাকবার জন্যে এত রুক্ষ তুলি, এত অপরাধী সংকুচিত দিব্যনাথ, এমন নম্র জ্যোতি?
362 মুখে সুজাতা এর কোন কথাই বললেন নাবললেন, তুলি তুই খুব সুখী হবি
363
364 ৩২
365 দুপুর
366 দুই লক্ষ লোকের বসতিস্থল এই কলোনিটা কোন পরিকল্পনার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে নিপশ্চিমবঙ্গে এটাই প্রথম জবরদখল কলোনিপ্রথমে, আদিতে, এখানে জায়গা ছিল জমিদারের, কয়েকটা ফুলবাগান, অসংখ্য ডোবা পুকুর, কয়েকটি ছোট গ্রাম
367 সাতচল্লিশ সালের পর জনসংখ্যার চাপে অঞ্চলটার ম্যাপ পালটে গেলমাঠ, বাদা, নারকেল বাগান, ধানক্ষেত, গ্রাম সব গ্রাস করে গড়ে উঠল কলোনি
368 অঞ্চল থেকে চিরকাল বিরোধীপক্ষ ভোট পেয়েছেসেইজন্যই বোধহয় সরকার এখানে একটি পাকা রাস্তা, স্বাস্থ্য চিকিৎসাকেন্দ্র, পর্যাপ্ত সংখ্যায় নলকূপ, একটি বাস রুট, কিছুই করেন নিযাঁরা এই দুদশকে অবস্থা ফিরিয়ে ধনী হয়েছেন তাঁরাও কিছুই করেন নি
369 এতদিনে সি. এম. ডি. .1 তৎপর হয়েছে বলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে
1Calcutta Metropolitan Development Authority
370 এখন আর কোন অশান্তি নেই, কোন ভয় নেইএখন আর হঠাৎ দোকানবাজারে ঝাঁপ পড়ে না, বাড়িকে বাড়ি দরজা বন্ধ হয় না, ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে পালায় না রিকশাচালক, নেড়িকুকুর, পথচারীএখন আর সহসা শোনা যায় না বোমা ফাটার শব্দ, মার-মার, হই-হই1-হল্লা, মরণার্তের2 গোঙানি, ঘাতকের উল্লাস
371 এখন আর ছুটে যায় না কালোগাড়ি1, হেলমেট পরা পুলিশ মিলিটারি বন্দুক উঁচিয়ে তাড়া করে বেড়ায় না কোন আর্ত কিশোরকেএখন আর চোখে পড়ে না ভ্যানের চাকায় দড়ি দিয়ে বাঁধা জীবন্ত শরীর খোয়ায় আছড়াতে আছড়াতে টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য
372 এখন রাস্তায় রাস্তায় রক্ত, কোন মায়ের কণ্ঠের আর্ত বিলাপ অনুপস্থিতদেওয়ালের লেখাগুলি পর্যন্ত মুছে গেছে নতুন লেখার নিচেঅনেক, অনেক দিন বাঁচুন কমরেডমজুমদারবিপ্লবীতোমাকে ভুলব নাপল্লীর
373
374 ৩৩
375 কিশোরদের নিষ্ঠুর ঘাতকের ক্ষমা নেইসব লেখা চাপা পড়ে গেছে বিজয়ীর উদ্ধব জয় বন্দনার নিচে
376 এখন আর মরতে মরতে কোন কিশোর-কণ্ঠ চেঁচিয়ে স্লোগান দেয় নাআড়াই বছরের বিশৃঙ্খলা, যা এখানকার জীবনের সুশৃঙ্খল নিয়মকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল, তার কোন চিহ্ন নেই
377 সুখী শান্তিপ্রিয় পরিবারগুলি আবার ফিরে এসেছেএখন দেখা যায় চালের অবাধ চোরাই কারবার, অহোরাত্র সিনেমার ম্যারাপ, নররূপী দেবতার মন্দিরের সামনে মুক্তিকামী জনতার উন্মত্ত ভিড়
378 সে দিনের ঘাতকরা এখন আংরাখা বদল করে নতুন পরিচয়ে নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায়একটা অধ্যায়ে পূর্ণচ্ছেদ পড়েছেদাঁড়িএখন মহোপন্যাসের নতুন অধ্যায় শুরু
379 শুধু সরু পথগুলির মোড়ে মোড়ে স্মৃতিফলকগুলো শরীরের দৃশ্য জায়গায় কুৎসিত ক্ষতচিহ্নের মত নিরন্তর স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে আছেকিন্তু সে সব স্মৃতিফলকে সমু-বিজিত-পার্থ-লালটুদের নাম নেইব্রতীর নাম থাকবেই নাওর নাম, ওদের নাম শুধু কয়েকটি হৃদয়ে বেঁচে আছেহয়ত
380 সমুদের বাড়িতে বসেছিলেন সুজাতাভল্ট থেকে গয়না আনা হয়ে গেছেগয়না তাঁর ব্যাগেনীপা, বিনি, তুলি, ব্রতীর ভাবীবউ1, চারজনের জন্যে একসময়ে গয়নাগুলো ভাগ করা হয়েছিল
381 নীপা বিনিকে যা দেবার তা দিয়ে দিয়েছেন
382 তুলি বলে, ব্রতীর ভাগের গয়নাগুলো ওকে দেওয়া উচিত1
1This sentence is missing from the 2014 edition.
383 নীপার মেয়ে, জ্যোতির ছেলের নামে কিছু রেখে সবই হয়ত তুলিকেই দিয়ে দেবেনসুজাতা নিজে কোনদিনই হাতে সরু বালা, কানে ফুল, গলায় একটা সরু হার ছাড়া কিছু পরেন নাব্রতী হবার পর থেকে রঙিন শাড়ী পরেন নি
384 এখন তাঁর চেহারা ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, সমুর মা ওঁর সামনে বসে নীরবে কাঁদছিলেনরোগা, কালো মুখ ভেসে যাচ্ছিল চোখের জলেএক বছরে ওঁর চেহারা আরো জীর্ণ হয়ে গেছেপরনে ময়লা মোটা থান
385 বড় জীর্ণ সমুদের বাড়ি, খোলার চালে শ্যাওলা, বেড়ার দেওয়াল ভাঙা,
386
387 ৩৪
388 পিসবোর্ডের তালিমারা1তবু আজ দুবছর ধরে একমাত্র এখানে এলেই সুজাতা শান্তি পানমনে হয় নিজের জায়গায় এলেন
389 প্রথমবার ওঁকে দেখে সমুর দিদি কেঁদে ফেলেছিলএবার ওঁকে দেখেই ওর ভুরু কুঁচকে গেলসমুর মৃত্যুর পরেই ওর বাবা মারা যানতখন থেকে সমুর দিদিকেই উদয়াস্ত ছেলে পড়িয়ে সংসার চালাতে হয়েছেচিতার আগুনে শরীরের স্নেহ পদার্থ1 পুড়ে যায়সংসারের আগুনে সমুর দিদি পুড়ে ঝলসে গেছেএখন ওর চোখে-মুখে রুক্ষতা, রাগসমু ওকেই মেরে রেখে গেছে বাড়ির একমাত্র ছেলে ছিল ভাল কলেজে পড়বে বলে সমুর দিদিকে ওদের বাবা পড়ার খরচ দেন নি নিজের পড়ার খরচ ছেলে পড়িয়ে চালাত
390 ওঁর দিকে রুক্ষ চোখে তাকিয়ে কথা না বলে সমুর দিদি বেরিয়ে গেলসুজাতা বুঝলেন ওই এখন সংসারের কর্তা আর চাইছে না সুজাতা ওর ভায়ের কথা মনে করিয়ে দিতে বছর বছর এখানে আসেনবড় অসহায় মনে হল নিজেকেওর দিকে সকাতরে তাকালেনবলতে ইচ্ছে হল, এই আসা যাওয়ার দোরটা বন্ধ কর নাবলতে পারলেন নাসমুর দিদি বেরিয়ে গেল
391 সমুর মা কাঁদছিলেনসুজাতা চুপ করে বসেছিলেন
392 অরা কয় কাইন্দনা মা! হেয় আর কি ফিরিব? কয় তুমি তবু নি ভাল আছপার্থের মায়ে, দিদি, পার্থরে হারাইলআবার পার্থের ভাইটা দেহেন হেই অইতে ঘরে আইতে পারে নাহেয়া গিয়া রইছে তার মাসির বারি, কুনখানে বা1
393 এখনো ফেরেনি?
394 না দিদিযারা গেল তারা গেলইযারা জীউটুকু ধইরা আছে, তারাও কুন--দিন ঘরে ফিরব না বিধির কি বিধান তাই কয়েন দিদি1
395 সমুর মা কাঁদতে লাগলেন
396 প্রথমবার, একবছর পুরতে, এখানে আসার আগে খুব ইতস্তত করেছিলেন সুজাতাসমুর মা তখন মাস হল বিধবা হয়েছেন
397 পাড়ায় ঢুকে সমুর নাম বলতে লোকজন, পাড়ার ছেলেরা অবাক হয়ে ওঁর
398
399 ৩৫
400 দিকে তাকিয়েছিলপ্রথমটা কেউ বলতে চায়নিশেষে একজন বলেছিল, দেখেন গিয়াওই বারিখান1
1Translated into standard Bangla: দেখুন গিয়েওই বাড়িটা
401 সুজাতার দামী সাদা শাড়ি, অভিজাত চেহারা, কাঁচাপাকা চুলঘেরা1 প্রৌঢ় মুখর বনেদীয়ানা দেখে সমুর মা হতভম্ব হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিলেন
402 আমি ব্রতীর মা
403 একথা বলতেই, সমুরে! বলে মহিলা ডুকরে কেঁদে ওঠেনসুজাতাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন উনি, আপনার পোলায় দিদি! ডাইকা জীবনডা দিল আইছিল সমুগো সাবধান করতেতা হেয় জানছিল সমু তারা চাইরজন পারায় আইয়া পড়ছে, বুঝি রাতটুকু কাটব না অগোআইয়া যখন ব্রতী জিগাই সমু কোথা? আমি এট্টা কথা কইয়া চইলা যামু, আমি বললাম রাতে নি! কলোনি দিয়া যাইতে পারবা ধন? রাতটুকু এহানে থাহ, বিয়ান না আইতে যাইও বারি অদের নি রাতটুকু কাটল? হেদিন দিদি এহানে আমার এই অতটুনি ঘরে সমু, পার্থ আর ব্রতী জরাজরি কইরা শুইয়া রইল1
404 কোন ঘরে?
405 এই ঘরেঘর আর কই দিদি? মাইয়া গেল বোনদের নিয়া দাওয়ায়ওই দাওয়াটুকু বেরায়, হেখানে রইলএই ঘরে অরা রইলআমি যাইয়া জানলায় বইয়া রইলাম, কে আসে দ্যাখব1
406 এখানে ছিল ব্রতী?
407 দিদিহেয় আছিল দরিদ্র দোকানী, পুঞ্জি আছিল মাবাজারে একখানা খাতা, পেনসিল, ছেলেটের দোকান দিছিলএই ঘরখানা, তা কত কষ্টে তুলেছিলতা পোলারা এক কোণে রইলসমুর বাপেও জাগা, বিয়ান না আইতে অদের তুইলা দিব কোণে আমার ছিরা মাদুরে শুইয়া অগো কত কথা, কত হাসিদিদি, ব্রতীর হাসিখান আমার চক্ষে ভাসে গোসোনার কান্তি পোলা আপনার1
408 ব্রতী এখানে আসত?
409 কত! আইত, বইত, জল দেন মাসিমা, চা দেন, কেমুন ডাইকা কইত1
410 ব্রতী এখানে আসত! এখানে এসে চা খেত, গল্প করত, সময় কাটাত!
411
412 ৩৬
413 সমুর মাকে, ওদের ঘর, দেওয়ালে ক্যালেণ্ডার কাটা ছবি, ভাঙা পেয়ালা, সব যেন নতুন চোখে দেখেছিলেন সুজাতা
414 ব্রতী তাঁর রক্তের রক্ত, যাকে জন্ম দিতে গিয়ে তাঁর প্রাণসংশয় হয়েছিল, যে তাঁর কাছে ক্রমশঃ অবোধ্য হয়ে গিয়েছিল, অচেনা, তার সঙ্গে সুজাতার যেন নতুন করে পরিচয় শুরু হয় সেই মুহূর্ত থেকে
415 স্বপ্নে তিনি কতবার ব্রতীকে দেখতে পাননীল শার্ট পরেছে ব্রতী, চুল আঁচড়াচ্ছেতাঁর দিকে তাকিয়ে আছে ব্রতী
416 গভীর অভিনিবেশে দেখে নিচ্ছে তাঁর মুখ
417 কত বিনিদ্র রাতের শেষে, যখন শুধু শারীরিক ক্লান্তিতে অবসন্ন সুজাতার চোখের পাতাকে পরাজিত করে ঘুম নামে, তখন ব্রতী সিঁড়ির নিচু থেকে ওঁর দিকে তেমনি গভীর চোখে চেয়ে থাকেসুজাতা বলেন, ব্রতী তুই যাস নাব্রতী চেয়ে থাকেসুজাতা বলেন, আয় ব্রতী উঠে আয়ব্রতী চেয়ে থাকেকথা বলে না, ঠোঁটে হাসি থাকে না তখন
418 কিন্তু এখানে ব্রতী কথা বলত, হাসত, বলত মাসিমা, চা করুন, জল দিন আগে
419 সমুর মা বলেছিলেন, আমি বলতামতুমি কেন এমন কইরা হকল জলাঞ্জলি দিতেছ ধন! কি নাই তোমার? সভাউজ্জ্বল বাপ, বিদ্ধান মাহে কইত না কিছুশুধা হাসতআর হাসিখানা আমার চক্ষে নি ভাসে দিদি1
420 তখনই বুকে ধাক্কা লেগেছিল সুজাতারব্রতীর হাসি, সেই আশ্চর্য হাসিতিনি ভেবেছিলেন সব স্মৃতি তাঁর একলারব্রতী সমুর মার বুকেও স্মৃতি রেখে গেছে তা তিনি জানতেন না কেন?
421 ব্রতী সেদিন বাড়িতেই ছিলসারাদিন কি যেন সব লিখেছিল তেতলায় বসে; পরে সুজাতা দেখেছেন দেওয়ালে স্লোগান লেখার বয়ান সবসে সব কাগজ ওরা তল্লাসী করবার সময়ে নিয়ে যায়, এখন বাড়ীতে নেই
422 এখন বাড়িতে আছে ব্রতীর স্কুলের কলেজের বই, খাতা, প্রাইজের বই, সোনার মেডেল, দার্জিলিঙে বন্ধুদের সঙ্গে তোলা ছবি, দৌড়বার1 জুতো, খেলার কাপব্রতীর জীবনের কয়েকটা বছরের স্মারকসব মনে আছে
423
424 ৩৭
425 সুজাতার, মা প্রাইজ পাব, তুমি যাবে না? ব্রতীর পাড়ার পার্কে গিয়ে বালক সংঘে ভর্তি হওয়াগর্বভরে ছেলেদের সঙ্গে ড্রাম আর বিউগল বাজিয়ে স্বাধীনতা দিবসে রাস্তা দিয়ে মার্চ করা, ফুটবল জিতে কাপ এনেছিল কিন্তু পা ভেঙে এসেছিল
426 যে সময় থেকে বদলে যেতে শুরু করে সেই বছরখানেকের বই, কাগজ, ইস্তাহার, বিপ্লবের আহ্বান লেখা কাগজ, পত্রিকা, কিছু বাড়িতে নেইসব ওরা ঝেঁটিয়ে নিয়ে গেছেসুজাতা শুনেছেন ওগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়
427 সারাদিন বাড়িতে ছিল ব্রতীব্যাঙ্ক থেকে সুজাতা ফিরে ওকে বাড়িতে দেখে খুব অবাক হনপরে বুঝেছেন সারাদিন একটা টেলিফোনের জন্য অপেক্ষা করছিল জানত সমুরা ফিরে যাবেজানত, সমুদের নিষেধ করে পাঠানো হয়েছেসমুদের নিষেধ জানাতে যে যায়, সে যে সমুদের কাছে যাবে না, পাড়ায় গিয়ে খবর দেবে, তা ব্রতী বোঝে নিফোন পেয়ে তবে বুঝেছিল সর্বনাশ হয়েছে
428 এই করেই মরেছিল ওরাবহুজনকে বিশ্বাস করেযাদের বিশ্বাস করেছে তাদের কারো কারো কাছে চাকরি, নিরাপত্তা, সুখী জীবনের প্রলোভন বড় হতে পারে তা ব্রতীরা বোঝে নিবোঝে নি, প্রথম থেকেই বহুজন ওদের ফাঁস করে দেবে বলেই দলে ঢোকেব্রতীর বয়স কম ছিলএকটা বিশ্বাস ওকে, ওদের অন্ধ করে দিয়েছিলওরা বোঝে নি যে-ব্যবস্থার সঙ্গে ওদের যুদ্ধ, সে-ব্যবস্থা জন্মের আগেই বহুজনকে ভ্রূণেই বিষাক্ত করে দেয়সব তরুণ আদর্শ-দীক্ষিত নয়, সবাই মৃত্যুকে ভয় করে না, এমন নয়, কথা ব্রতীরা জানত নাতাই ব্রতী ভেবেছিল খবর গেছে, সমুরা সতর্ক হবে, টেলিফোনেও জানাবে সব ঠিক আছে
429 যখন সারাদিন গেল, সন্ধ্যা হল, শীতের সন্ধ্যা কলকাতায় তাড়াতাড়ি আসে তখন বোধহয় ব্রতী ভেবেছিল খবর আসবার হলে এসে যেত এতক্ষণদুপুর অব্দি যখন ফোন এল না তখন ওর মনে উদ্বেগ হয়দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল, সন্ধ্যা এলসুজাতা ফিরে এলেন
430 কিরে আজ বেরোসনি?
431 না
432
433 ৩৮
434 কেন?
435 কেন আর, এমনিচল না, চা খাবে চল না
436 একসঙ্গে চা খেলেন সুজাতা, ব্রতী বসেছিল দরজার দিকে পেছন ফিরেওর গায়ে ছিল একটা পুরানো শালঅনেকদিনের শালনীলচে রঙ, আগাগোড়া ফুটো ফুটোব্রতী শীতের ভয়ে ওটা গায়ে জড়িয়ে থাকত বাড়িতেসুজাতাও বলতেন, ওটা ছাড় না বাপু, আরেকটা গায়ে দে
437 ব্রতী বলত, বেশ ওম হয়, হেম বলে
438 সেই শালটা গায়ে; চুলটা আঁচড়ানো নেই, ব্রতীর পেছনে দরজা খোলাদরজা দিয়ে দেখা যায় উঠোনের ওপারে পাঁচিল, বাসন মাজার কলতলা
439 চা খাওয়ার সময়ে ব্রতী অনেকদিন পর বিনির সঙ্গে খুনসুটি করেছিলব্রতী কয়েকদিন আগে বন্ধুদের সঙ্গে দীঘা গিয়েছিলপরে সুজাতা জেনেছেন দীঘা যায় নিজেনেছেন, খড়্গপুর স্টেশনেই পুলিশ গিজগিজ করছিলদীঘার পথে বাস থামিয়ে থামিয়ে হেলমেট পরা এম. পি. উঠছিলটর্চ ফেলে মুখ দেখছিল যাত্রীদেরকোন কোন গ্রামের সামনে বাস স্লো-মোশানে যেতে বাধ্য হয়দুধারে, পথের দুধারে অন্ধকারে বেয়নেট উঁচিয়ে পাহারাদার দাঁড়িয়েছিলব্রতী দীঘা যায় নি
440 সুজাতা তখন তো জানেন নাবিনিও জানে নাবিনি ওকে দীঘার কথা জিগ্যেস করছিল
441 ব্রতী বলল, দীঘা একটা বাজে জায়গাযেমন থাকার অসুবিধে তেমনি খাওয়ার
442 আহা আমার মাসতুত বোন গিয়েছিলসে সে-কথা বলল না?
443 তোমার বোন
444 আর তোমার বুঝি অচেনা? তোমার প্রাণের বন্ধু দীপকের সঙ্গে টেনিস খেলে জান না? খুব আড্ডা মারতে যাও দীপকের বাড়ি?
445 আমি কি চিনি তোমার বোনকে?
446 সুজাতা বললেন, নাই বা চিনলিগেছলি1 যখন তাকিয়েও দেখেছিস
447 কেন?
448
449 ৩৯
450 খুব সুন্দর সে
451 কি যে বল? তোমার চেয়ে সুন্দর?
452 বিনি অমনি বলল, মা, ব্রতী কিন্তু তোমায় তেল দিচ্ছেনিশ্চয় ওর কোন মতলব আছে
453 কি যে বল বিনি? ওর কি এখন সিনেমার টাকা দরকার হয়, না হাতখরচ? মাকে খুশি করবার কোন দরকার নেই ওরমাকেই দরকার নেই
454 এটা কি বললে মা?
455 বিনি বলল, তুমি আচ্ছা বোকা মা! আমি হলে যেমন ন্যাশনাল স্কলারশিপের টাকাগুলো পেত অমনি বাগিয়ে নিতাম
456 অত সোজা নয় বৌদি, দাদাকে জিগ্যেস করে দেখ
457 কেন, দাদাকে জিগ্যেস করব কেন?
458 দাদাটা হাঁদা ছিলখরচ করে ফেলত হাত খরচের টাকাআমার পইতের টাকা থেকে ওকে ধার দিতামকিন্তু টাকায় টাকা সুদ আদায় করতাম
459 সুজাতার কেন মনে হয়েছিল ব্রতী ওঁকে এড়িয়ে গেল? উনি বলেছিলেন, মাকে তোর দরকার হয় নাকি? জানতে চাস কখনো মার কথা? দিন নেই, রাত নেই, শুধু বেরিয়ে যাসবলিস কাজ আছে
460 কাজ থাকে যে
461 বাবা রে বাবা! এখনই এত কাজ? তোমার দাদার মত যখন সিরিয়াস কাজ করবে তখন কি হবে?
462 ব্রতী বলেছিল, আমি সিরিয়াস কাজ করি না তোমায় কে বলল?
463 সিরিয়াস কাজ মানে আড্ডা মারা
464 আড্ডা মারা একটা সিরিয়াস কাজ নয়?
465 জানি মশাই জানিআরো একটা জানি
466 কি জান?
467 নন্দিনীর সঙ্গে আড্ডা মারা সবচেয়ে সিরিয়াস কাজ
468 নন্দিনীর সঙ্গে আড্ডা মারি তোমায় কে বলল?
469 বলবে আবার কে মশাই? আমি বুঝি নন্দিনীর ফোন ধরি না মাঝে মধ্যে?
470
471 ৪০
472 ব্রতী হেসেছিলনিঃশব্দে হাসত চোখ হাসত মুখ জ্বলজ্বল করত ওরহেসেই চিরদিন উত্তর দেবার দায় এড়িয়ে যেত
473 চল মা, লুডো খেলি ওপরে
474 বিনি আবার বলেছিল, মা, ব্রতীর নিশ্চয় কোন মতলব আছে আজ
475 তুমিও চল
476 না বাবাতুলির সঙ্গে কোথায় যেতে হবেনা গেলে মেজাজ করবে
477 ইচ্ছে না করলে যাও কেন?
478 ব্রতী মৃদু গলায় বলেছিল
479 সুজাতা আর ব্রতী ওপরে লুডো খেলছিলেনলুডো খেলতে খেলতে সুজাতা বলেছিলেন, ব্রতী, নন্দিনী কে রে?
480 একটি মেয়ে
481 আমাকে একদিন দেখাবি?
482 দেখতে চাইলে দেখাব
483 দেখতেই চাইছি
484 দেখলে চোটে যাবে
485 কেন?
486 খুব সাধারণ দেখতে
487 তাতে কি?
488 বসের ভাল লাগবে না
489 বাবাকে ব্রতীবস্বলত আড়ালেওর জ্ঞান হওয়া থেকে বাবার মুখেআমি বাড়ির বস্আমি যা বলব তাই হবে বাড়ীতেকথাটা ব্রতী কয়েক লক্ষবার শুনেছে
490 না লাগল
491 মা, তুমি কি জান বস্ পাঁচটার পর কোথায় যায়? রোজ রোজ?
492 হঠাৎ সুজাতার সন্দেহ হয়েছিল, ব্রতী দিব্যনাথের সঙ্গে টাইপিস্ট মেয়েটির মেলামেশার কথা জানে
493 কথা কেন হঠাৎ, ব্রতী?
494
495 ৪১
496 এমনিজান?
497 কথা থাক ব্রতী
498 ব্রতী কিছুক্ষণ মন দিয়ে খেলেছিলতারপর বলেছিল মা আমার জন্যে কি তোমার মনে খুব কষ্ট?
499 কিসের কষ্ট ব্রতী?
500 বল না?
501 কোন কষ্ট নেই ব্রতী
502 মাঝে মাঝে মনে হয় হয়তো আছেদাদাকে নিয়ে, দিদি ছোড়দিকে নিয়ে তোমার কোন কষ্ট নেই
503 সুজাতা কথা বলেন নিমিথ্যে বা মন রাখা কথা সুজাতা কখনো বলতে পারেন নি
504 কই, কিছু বললে না ?
505 কষ্টে থাকা কাকে বলে ব্রতী?
506 কষ্টে থাকলে তাকে বলে কষ্টে থাকা
507 সবাই কি আমার মনের মত হবে? ওরা ওদের মত হয়েছেওরা সুখী থাকলে আমি খুশি
508 ওরা কি সুখী?
509 তাই বলে
510 আশ্চর্য!
511 কি আশ্চর্য?
512 তুমি এত প্যাসিভ কেন মা?
513 না হয়ে উপায় কি বল? ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে আমাকে প্যাসিভ করেই রাখা হয়েছিল যেতোর বাবা...তোর ঠাকুমা...
514 দিব্যনাথ সুজাতাকে প্রথম তিন ছেলেমেয়ের ব্যাপারে সাধারণতম অধিকারও খাটাতে দেননিসব তাঁর মার হাতে ছিলস্ত্রীকে পদানত না করে মাকেও সম্মান দেওয়া যায় তা দিব্যনাথ জানতেন নাস্ত্রীকে পদানত রাখবেন, মাকে রাখবেন মাথায়, এই ছিল তাঁর নীতি
515
516 ৪২
517 সুজাতার আত্মসম্মান অভিমান ছিল খুব বেশীবিয়ের পরেই তিনি বুঝেছিলেন, সংসারে তিনি নিজেকে যত নেপথ্যে রাখবেন, তাতেই অন্যের সুখএইঅন্যবলতে তিনি দিব্যনাথ শাশুড়ীকে বুঝতেনজ্যোতি, তুলি, নীপা, তিনজনেই মাকে দেখেছিল অত্যন্ত গৌণ ভূমিকায়তারাও ওঁকে উপেক্ষা করে বড় হয়েছেতাই ওরাও সুজাতার মনে একদিনঅন্যদলে চলে যায়
518 অবশ্যই দিব্যনাথ সুজাতার মনের এইসব অতল ব্যথার খোঁজ রাখতেন নাস্ত্রীর প্রতি তিনি বিশেষ আসক্ত বা বিশেষ উদাসীন, কোনটাই ছিলেন নাস্ত্রী স্বামীকে স্বাভাবিক নিয়মে ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে, মানেস্বামীকে স্ত্রীর শ্রদ্ধা, ভালবাসা, আনুগত্য পাবার জন্যে কোন চেষ্টা করতে হয় নাদিব্যনাথ মনে করতেন বাড়ি করেছেন, চাকরবাকর রেখেছেন, যথেষ্ট কর্তব্য করেছেনবাইরে মেয়েদের নিয়ে ঢলাঢলি করবার কথা গোপন করতেও চেষ্টা করতেন না দিব্যনাথতাঁর ধারণা ছিল, তাঁর সব অধিকারই আছে
519 তা বলে তিনি অবিবেচক ননতাঁর ফার্মে মোটা টাকা আসতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সুজাতাকে কাজ ছেড়ে দিতে বলেন
520 সুজাতা কাজ ছাড়েন নিওটা তাঁর দ্বিতীয় বিদ্রোহ
521 দিব্যনাথ জানতেন তাঁর ছেলেমেয়েরা বাবার চরিত্রদৌর্বল্যের1 কথা জানেতাতে তিনি লজ্জিত হতেন নাকেননা তাঁর প্রথম তিন ছেলেমেয়ে তাঁকে মানে, তাঁর সব আচরণকে পুরুষজনোচিত2 মনে করে, তা তিনি জানতেন
522 তিনি জ্যোতিকে বলেছিলেন,
523 তোমার মা বিট পাজ্‌লিংকাজ ছাড়বেন না কেন? উনি , যাকে বলে ইচিং ফর ইনডিপেনডেন্‌স, সে টাইপের ওম্যান ননফ্যাশন করে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের মতও ননতবে উনি কাজ ছাড়বেন না কেন? আশ্চর্য!
524 তুমি মাকে বলেছ?
525 বললাম, এখন আর দরকার নেইএখন কাজ ছাড়সংসার দেখ-টেখমাও মারা গেছেন? বললেন, যখন ছেলেমেয়ে ছোট ছিল সংসার দেখলে ভাল হত, তখনও আমার কোন কাজ ছিল নাআমাকে কোন দায়িত্ব নিতে
526
527 ৪৩
528 দেওয়া হয়নিএখন তোমার ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গেছেসংসার নিয়মেই চলেএখন আমার প্রয়োজন এখানে আরো কম
529 সুজাতাকে দিব্যনাথ বুঝতে পারেন নিসুজাতা যাকে বলে উগ্র স্বাধীনচেতা মহিলা, তা ননআবার ফ্যাশনেবল চাকরি করে যেসব ফ্যাশনেবল মহিলারা গাড়ি চালিয়ে কলকাতা চষে ফেলেন, সুজাতা তাও নন
530 সুজাতা শান্ত, স্বল্পভাষী, পোষাকে-আশাকে সেকেলেবাড়ির গাড়ি পারতপক্ষে চড়েনট্রামে চড়ে ব্যাঙ্কে যান, ট্রামে ফেরেনবাড়ি থেকে বেরোন নাআত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করেন নাবাড়ি ফিরে একটু বই পড়েন, টবের গাছে জল দেন, ছোট ছেলেকে পেলে একটু গল্প করেন
531 কাজ না-ছাড়া সুজাতার দ্বিতীয় বিদ্রোহ! প্রথম বিদ্রোহটা সুজাতা ব্রতীর দুবছর বয়সে করেনদিব্যনাথ কিছুতেই ওঁকে পঞ্চমবারমাহতে বাধ্য করতে পারেন নি
532 দিব্যনাথ বেজায় খেপে গিয়েছিলেনবলেছিলেন, বিয়ে করলে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই একটা ডিউটি থাকেতোমার আপত্তিটা কোথায়?
533 সুজাতা রাজী হন নি
534 তুমি আমাকে ডিনাই করছ
535 তুমি তোমার ফুলফিলমেণ্টের জন্যে একা আমার ওপর কোনদিনই নির্ভর কর নি
536 কি বলতে চাও?
537 যা বলছি তা তুমি জান, আমিও জানি
538 দিব্যনাথ আগে, সুজাতা যখন পরপর মা হয়ে চলেছিলেন, তখনো নিয়মিত অন্য মেয়েদের সাহচর্য করতেনএরপর থেকে তা আরো বাড়িয়ে দেনকিন্তু সেটা যদি ফাঁদ হয়, সুজাতা সে ফাঁদে ধরা দেন নি
539 কিন্তু ব্রতীর মৃত্যুর আগের দিন সুজাতা ব্রতীর সঙ্গে কথা বলতে এসব কথা বলেন নিএখন মনে হয় জানত, সবই জানত ব্রতী, সবই বুঝতসেজন্য মার ওপর ওর সব সময়ে চোখ থাকতসুজাতার অসুখ হলে দশ বছর বয়সেও ব্রতী খেলা ছেড়ে চলে আসতবলত তোমার মাথায় বাতাস করব?
540
541 ৪৪
542 দিব্যনাথ বলতেন মিলক্‌সপ্‌মেয়েমার্কা1 ছেলেনো ম্যানলিনেস
543 ব্রতীই প্রমাণ করে দিয়ে গিয়েছে ব্রতী কি দিয়ে গড়া ছিল, কত শক্তি আর সাহস দিয়ে
544 সেদিন ব্রতী ওঁর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে বসেছিলতারপর বলেছিল, খেলা থাকএস না, গল্প করি আজ?
545 দাঁড়া, কি রাঁধবে বলে আসি
546 ছোড়দি নেই?
547 নাতুলি টোনির একজিবিশান নিয়ে ব্যস্তএকবার শুধু এসে বিনিকে নিয়ে যাবে
548 তাও বটে!
549 কাল কি খাবি, বল?
550 হঠাৎ?
551 কাল তোর জন্মদিন না?
552 বাব্বা, জন্মদিন তোমার মনে থাকে?
553 থাকে না?
554 আমার থাকে না
555 আমার ভুল হয় কখন?
556 কাল নিশ্চয়ই তুমি পায়েস করবে?
557 এখন শুধু একটা পায়েস করি
558 দাঁড়াও, কি খাওয়া যায় ভাবি
559 মাংস খেতে চাস না যেন
560 কেন, বস্ বাড়িতে খাচ্ছে?
561 হ্যাঁ
562 কর না যা হয় একটা
563 সুজাতা নিচে যাচ্ছেন, এমন সময় ফোন বাজলব্রতী ফোন ধরেছে দেখে উনি নিচে গেলেন
564 উনি উপরে এলেনদেখলেন! ব্রতী নীল শার্ট আর প্যাণ্ট পরে চুল আঁচড়াচ্ছে
565
566 ৪৫
567 কি হল?
568 একটু বেরোতে হচ্ছে, গোটা কয়েক টাকা দাও
569 কোথায় বেরোচ্ছিস?
570 একটু কাজেটাকা দাও
571 এই নেকখন ফিরবি?
572 ফিরব...ফিরব...দাঁড়াও
573 ব্রতী দেখে নিল প্যাণ্টের পকেটে কি কি আছেএকটা কাগজ ছিঁড়ে ফেলল কুচিয়ে
574 কোনদিকে যাচ্ছিস?
575 কোন বিশেষ আশঙ্কা না করেই সুজাতা এই স্বাভাবিক প্রশ্নটা করেছিলেনকেননা, কলকাতায় তখন একটা অন্য অবস্থা চলছেবুড়োরা-প্রৌঢ়রা-চল্লিশ পেরুনো লোকেরা যে-কোন জায়গায় যেতে পারেকিন্তু তরুণদের কাছে তখন কলকাতার অনেক জায়গাই নিষিদ্ধ অঞ্চল
576 তখন সেই আড়াই বছরে কি হত না হত কলকাতার পুরনো কাগজ ঘাঁটতে দিয়ে দেখে কি সুজাতা কম অবাক হন এই দিন আগে?
577 সেসময় তাঁর মনে হত, কেবলি মনে হত, সব যেন উল্টো-পাল্টাব্রতী যখন জীবিত, ব্রতীও যে চরম দণ্ডে দণ্ডিতদের দলে
578 তা যখন জানেন না সুজাতা, তখনো রোজ কাগজে এক একটা ঘটনার কথা পড়তেন আর শিউরে উঠতেন
579 সে সময় আবার তাঁর বাড়িতে কেউ কাগজের ভাঁজই খুলত নাবলত কাগজ খুললেই দেখা যাবে কতজন মরেছে, কি ভাবে মরেছে, তার বীভৎস সব বর্ণনা!
580 দেখলেই সকলের খারাপ লাগত তাই সুজাতা আর ব্রতী ছাড়া কেউ কাগজ পড়ত না
581 কাগজ দেখতেন সুজাতা, ব্যাঙ্কে বেরোতেনকেন মনে হত কলকাতা একটা রং সিটি? মনে হত সেই ময়দানভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-মেট্রো-
582
583 ৪৬
584 গান্ধীর মূর্তি-মনুমেণ্ট, সব আছে, তবু এটা কলকাতা নয়? কলকাতাকে তিনি চেনেন নাজানেন না
585 কাগজ খুলে পরে দেখেছিল, যে ভোরে তাঁর ঘরে টেলিফোন বাজে, সেদিনও হাপুর বাজারে সোনার দর চড়েছিল, ব্যাঙ্কের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বহন করে ভারতীয় হাতির বাচ্চা দমদম থেকে টোকিওতে উড়ে গিয়েছিল, কলকাতায় বিদেশী ছবির উৎসব হয়েছিল, সচেতন শহর কলকাতা সচেতন সংগ্রামী শিল্পী বুদ্ধিজীবীরা ভিয়েতনামে বর্বরতার, প্রতিবাদে আমেরিকান কনসুলেটের সামনে রেড রোডে, সুরেন ব্যানার্জি রোডের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছিলেন
586 সব কিছু ঘটেছিলকলকাতায় তাপমান যন্ত্রে যা যা স্বাভাবিক সবযে জন্যে কলকাতা ভারতের সবচেয়ে সচেতন শহর
587 এতেই বোঝা যাচ্ছে কলকাতা সেদিনও স্বাভাবিক ছিলশুধু ব্রতী ভবানীপুর থেকে দক্ষিণ-যাদবপুর যেতে পারছিল না, বারাসত থেকে আটটি ছেলে প্রথমে ফাঁস বাঁধা হয়ে জ্ঞান হারিয়ে, তারপর গুলি খেয়ে লাশ না হয়ে বেরোতে পারছিল নাপূর্ব-কলকাতায় পাড়ার আবাল্য চেনা ছেলের রক্তাক্ত মৃতদেহ রিক্শায় বসিয়ে, তাশা ড্রাম বাজিয়ে, যুবকেরা কি যেন পুজোর বিসর্জন মিছিলে প্রতিমার আগে নেচে যাচ্ছিল
588 কলকাতায় সচেতন সংগ্রামী নাগরিকদের কাছে সেটা অস্বাভাবিক মনে হয়নি
589 কলকাতায় লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবীরা ঠিক তার এক বছর তিন মাস বাদে বাংলাদেশের সহায় সমর্থনকল্পে1 পশ্চিমবঙ্গ তোলপাড় করে ফেলেছিলনিশ্চয় তারাই ঠিক পথে চিন্তা করেছিল, সুজাতার মত মায়েরা ভুল পথে চিন্তা করেছিলেন? পশ্চিমবঙ্গের তরুণরা শহরে পাড়া থেকে পাড়া যেতে পারে না এতে তাদের সংগ্রামী বিবেক এতটুকু পীড়িত হয় নি যখন, তখন নিশ্চয় তারাই যথার্থ?
590 পশ্চিমবঙ্গের তরুণদের জীবন বিপন্ন, এটা নিশ্চয় কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
591
592 ৪৭
593 নয়যদি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হত, তাহলে কি মিছিল শহর কলকাতার সংগ্রামী শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীরা তা নিয়ে কলম ধরতেন না?
594

Highlight the first use of each word